শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১১

নামাজ : ইসলামের মৌল ভিত্তির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রসূল পাঠিয়েছেন। যেহেতু মানুষ মরণশীল তাই নবী ও রাসূলগণের ওফাতের পর মানুষ যাতে পথভ্রষ্ট না হয়, তাই আল্লাহ তাবারক ওয়া তায়ালা তাদের উপর নাযিল করেছেন আসমানি কিতাব।

সৃষ্টির সূচনা থেকে অর্থাৎ হযরত আদম (আঃ) থেকে হযরত মুহাম্মদ (সা:) পর্যন্ত যত নবী-রসূল দুনিয়াতে এসেছেন তারা সকলেই একই রিসালাতের বানী প্রচার করেছেন। তারা মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন কিভাবে মহান আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য করতে হবে। আনুগত্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম হচ্ছে সালাত, যা সকল নবী-রাসূলের উম্মতের উপর অবশ্য কর্তব্য ছিল এবং আছে।

যেমন বাইবেলে আছে-



    হুকুমে স্বাক্ষর দেওয়া হয়ে গেছে শুনে দানিয়েল তাঁর বাড়ীর উপর তলার ঘরে গেলেন; সেই ঘরের জানলা জেরুজালেমের দিকে খোলা ছিল। তিনি নিজের অভ্যাস মতই দিনে তিনবার হাঁটু পেতে প্রার্থনা করে তাঁর ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন।  (দানি 6:10)



এখানে দেখা যাচ্ছে যে, পূর্বে নামাজ তিন ওয়াক্ত ফরজ করা হয়েছিল। যেহেতু নবী মুহাম্মদ (সা:)  আখেরি নবী এবং ইসলাম  চূড়ান্ত জীবনবিধান, তাই বান্দার জন্য যা মঙ্গল অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারণ করা হয়েছে। নামাজ যে পাঁচ ওয়াক্ত, এ সম্পর্কে পবিত্র কোরানে  বিভিন্ন জায়গায় বলা হয়েছে:



    অতএব, তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা স্মরণ কর সন্ধ্যায় ও সকালে,এবং অপরাহ্নে ও মধ্য দুপুর ও রাতের প্রথম অংশে। নভোমন্ডল ও ভূমণ্ডলে, তাঁরই প্রশংসা। ( সূরা রোম, আয়াত-১৭-১৮)



    আর দিনের দুই প্রান্তেই নামায ঠিক রাখবে, এবং রাতের প্রান্তভাগে পূর্ণ কাজ অবশ্যই পাপ দূর করে দেয়, যারা স্মরণ রাখে তাদের জন্য এটি এক মহা স্মারক। (সূরা হুদ, আয়াত- ১১৪)



    সূর্য ঢলে পড়ার সময় থেকে রাত্রির অন্ধকার পর্যন্ত নামায কায়েম করুন এবং ফজরের কোরআন পাঠও। নিশ্চয় ফজরের কোরআন পাঠ মুখামুখি হয়। (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত-৭৮)



    সুতরাং এরা যা বলে সে বিষয়ে ধৈর্য ধারণ করুন এবং আপনার পালনকর্তার প্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন সূর্যোদয়ের পূর্বে, সূর্যাস্তের পূর্বে এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন রাত্রির কিছু অংশ ও বাদিভাগে, সম্ভবত: তাতে আপনি সন্তুষ্ট হবেন। (সূরা ত্বহা, আয়াত-১৩০)



পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কিভাবে পড়তে হবে তা রসূল (সা:) আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। নামাজ বান্দার উপর আল্লাহর অধিকার। পবিত্র কোরানে কমপক্ষে দু'শত বার নামাজের হুকুমটি এসেছে। মহান আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে যেমন: ভ্রমণ, অসুস্থতা, সফর ইত্যাদি পরিস্থিতিতে নামাজকে সহজ করে দিয়েছেন অর্থাৎ শিথিল করেছেন। কেননা আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলেছেন, তিনি কারো উপর সাধ্যাতীত কিছু চাপিয়ে দেন না। কিন্তু উপযুক্ত কারণ ছাড়া কেউ এই শিথিলতার সুযোগ নিতে পারবে না। নামাজের ব্যাপারে অবহেলা মারাত্নক অপরাধ। লোক দেখানো নামাজির সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন:



    অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাযীর,যারা তাদের নামায সম্বন্ধে বে-খবর; যারা তা লোক-দেখানোর জন্য করে (সূরা মাউন, আয়াত-৩-৬)



নামাজ কাফির এবং মুমিনের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশকারী। অর্থাৎ নামাজ ব্যতীত ঈমানের কোনই মূল্য নেই। আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে প্রশ্ন করেছেন, তোমরা কি ভেবেছ শুধু ঈমান এনেই জান্নাতে চলে যাবে?



নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত হওয়ার কিছু কারণঃ

আরবি সালাত শব্দটি ফারসিতে নামাজ নামে পরিচিত। সাধারণভাবে সালাত অর্থ হচ্ছে প্রার্থনা করা। কিন্তু সালাত বা নামাজ শুধুমাত্র প্রার্থনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সালাত মানুষের পাপ ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয়, তাকে অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে। এতে শারীরিক উপকারিতা পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা মুসলিমরা আত্মিক উপকারিতার জন্যেই নামাজ পড়ি। শারীরিক ও মানুষিক উপকারিতা হচ্ছে আমাদের বোনাস।  আমরা জানি, মানুষের মস্তিষ্কে সেই বিষয়টিই বেশী স্থায়ী থাকে যা প্রতিনিয়ত তার সামনে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। যেমন, আমারা টিভিতে দেখতে পাই একই বিজ্ঞাপন বারবার প্রচার করা হচ্ছে। বারবার প্রচার এই জন্যেই করা হয় যাতে বিজ্ঞাপিত পণ্যটির নাম মানুষের মস্তিষ্কে দৃঢ়ভাবে গেঁথে যায়। ফলে সে ঐ পণ্যটি কিনবে। একইভাবে নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত করা হয়েছে যাতে কোরানের শিক্ষা মানুষের সামনে দিনে কমপক্ষে পাঁচবার প্রচার করে তার মস্তিষ্কে দৃঢ়ভাবে গেঁথে দেয়া। তাই নামাজকে মানুষের জন্য প্রোগ্রামিং (Programming)  কথাটাই বেশী যুক্তিযুক্ত।



একটি উদাহরণ দেয়া যাক, যদি নামাজে সন্মানীত ঈমাম এই আয়াতগুলো পড়েন:

وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَآ أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا



    অর্থাৎ- তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা। তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত-২৩-২৪)




তাহলে কোন সন্তান তার মা-বাবার সাথে খারাপ আচরণ করার সময়ে নামাজে পঠিত এই আয়াতটির কথা মনে আসবে। তখন তার মধ্যে আল্লাহ ভীতির কারণে সে এই গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকবে। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা কি আমাদের এত সুন্দর বাস্তব শিক্ষা দেয়? এক কথায় প্রচলিত শিক্ষাকে শিক্ষা নয় বরং চাকরী করার ট্রেনিং বলাই ভাল। সমাজের বহু পিতা মাতার সন্তান উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেও পিতা-মাতার সাথে ভাল আচরণ করে না। যার জন্য সরকার বাধ্য হয়েছে পশ্চিমাদের মত ওল্ড হোম (Old Home) এর ব্যবস্থা করতে যা মুসলমান হিসেবে আমাদের জন্যে নিতান্তই লজ্জার। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদেরকে পেশাজীবী করতে পারে কিন্তু ভাল মানুষ হতে সাহায্য করে না।

সুরাং নামাজের অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে।



আর আল্লাহর বাণী যারা শুনেও একে গ্রহণ করে না, তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে-

    তার চাইতে অধিক জালেম কে, যাকে তার পালনকর্তার কালাম দ্বারা বুঝানো হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার পূর্ববর্তী কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়? আমি তাদের অন্তরের উপর পর্দা রেখে দিয়েছি, যেন তা না বোঝে এবং তাদের কানে রয়েছে বধিরতার বোঝা। যদি আপনি তাদেরকে সৎপথের প্রতি দাওয়াত দেন, তবে কখনই তারা সৎপথে আসবে না। (সূরা কাহাফ, আয়াত-৫৭)



সুতরাং যে ব্যক্তি কোরান অস্বীকার করছে, তার হেদায়েত বাতিল হয়ে গেছে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সবাইকে হেদায়েত দান করুন। আমীন।

বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১১

পুথি নিয়ে কিছু কথা

মুসলমানী গদ্যে-পদ্যে রচিত পূঁথি সাহিত্যের উন্মেষ কাল বিবেচনা করলে এটা অনুমাণ করা যথেষ্ট সংগত যে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে সংস্কৃতাকীর্ণ বাংলা প্রচলনের উদ্যোগের প্রতিক্রিয়ায় এমন একটি মুসলমানী ভাষার জন্ম হয়েছিলো। স্বাধীন সুলতানী আমলে বাংলা সাহিত্যে মুসলমানদের আগমন ঘটলেও তখনও পর্যন্ত বাংলা ভাষার সাহিত্যে পূঁথির প্রচলিত উর্দু ভাষার প্রচলন ঘটে নি।


পুথি নিয়ে এ ধরণের মন্তব্য দেখে কিছুটা খটকা লাগল।

ঢাবির এক গবেষক সম্প্রতি পাণ্ডুলিপি নিয়ে পিএইচডি থিসিস জমা দিয়েছেন। তার মতে, প্রাপ্ত বাংলা পাণ্ডুলিপির বর্তমান সংখ্যা প্রায় সাইত্রিশ হাজার। এর মধ্যে বলতে গেলে নগন্য সংখ্যক সম্পাদনা করা হয়েছে। প্রায় দুইশত। আর বিশাল সংখ্যক পাণ্ডুলিপির জ্ঞান-ভাণ্ডার রয়ে গেছে ধরা ছোয়ার বাইরে।

পাণ্ডুলিপির আক্ষরিক অর্থ- হাতে লেখা পুস্তক। আরও সহজ করে বললে- পাণ্ডুর বা ফ্যাকাশে রঙের কাগজে হাতে লেখা বই। এখন অবশ্য ছাপাখানা থেকে বের হওয়ার আগে মূল কপিকে পাণ্ডুলিপি বলে।

এবার পুথি নিয়ে গবেষকরা কি বলেন তা দেখা যাক।

মোহাম্মদ আব্দুল কাইউম বলেন,

"প্রাচীন যুগে অর্থাৎ ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার আগে পাণ্ডুলিপি শব্দটির ব্যবহার ছিল না বললেই চলে। তার বদলে ব্যবহৃত হত পুঁথি, যার অর্থ ছিল হাতে লেখা বই বা পুস্তক। সংস্কৃত 'পুস্তক' শব্দ থেকেই পুঁথি শব্দের ব্যুৎপত্তি। প্রাচীন পুঁথি বা পাণ্ডুলিপিতে লিপিকরেরা 'পুঁথি' শব্দটি সাধারণ ভাবে ব্যবহার করতেন। কিন্তু উনিশ শতকে পুঁথি সাহিত্যের উন্মেষ এবং কোলকাতার শোভাবাজারে স্থাপিত বিশেষ ধরণের পুঁথি বা বটতলার পুঁথির প্রচলনের ফলে পুঁথি শব্দ নিয়ে বিশেষ বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।" (পাণ্ডুলিপি পাঠ ও পাঠ-সমালোচনা, পৃ. ১৩-১৪)

ড. কল্পনা ভৌমিক বলেন,

"লিপির উদ্ভবের পর থেকে প্রাচীন সাহিত্যের যে নিদর্শন পাওয়া যায় তা সবই হাতে লেখা। হস্তলিখিত এই সাহিত্যাকৃতি যুগানুসারে বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। প্রাচীন যুগে একে বলা হত পুস্তক। পুস্তক শব্দ এসেছে পোস্ত বা পুস্ত থেকে। পোস্ত শব্দের অর্থ চামড়া। চামড়া অর্থাৎ পোস্ত-এর উপর প্রথম লেখা হত বলে একে প্রাচীন যুগে সাহিত্যাকৃতিকে বলা হত পুস্তক। পুস্তক শব্দটি সংস্কৃত। এই পুস্তক শব্দ থেকে উদ্ভূত হয় 'পুথি' শব্দ।

প্রাচীন যুগের পুস্তককেই মধ্যযুগে বলা হত পুথি। অর্থাৎ পুথি এবং পুস্তক শব্দ সমার্থক। মধ্যযুগের শুরুতে বেদ থেকে শুরু করে ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ, নাটক প্রভৃতি সাহিত্যকৃতিকে পুথি বলা হত। এই সময় পুস্তককে গ্রন্থ নামেও অভিহিত করা হত। গ্রন্থ শব্দটি এসেছে গ্রন্থি থেকে। পুথির মাঝখানে ছিদ্র করে রজ্জু দ্বারা একে গ্রন্থিবদ্ধ করে আঁটসাঁটভাবে বাঁধা হত বলে একে বলা হত গ্রন্থ।...

মধ্যযুগের শেষ অর্থাৎ অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে পুথি শব্দ ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এই সময় বাংলা সাহিত্যের মুসলমান কবিদের রচিত কাব্যগ্রন্থ, যেমন-রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান জাতীয় কাব্য: ইউসুফ-জোলেখা, সয়ফুলমুলক বদিউজ্জামান, লাইলী-মজনু.....এইসময় রচিত গ্রন্থসমূহে আরবি, ফার্সী প্রভৃতি ভাষার শব্দের সংমিশ্রণ ঘটেছে। ফলে আরবী-ফার্সী শব্দের প্রচুর ব্যবহারের জন্য এই শ্রেণীর কাব্যকে কেউ কেউ দোভাষী পুথি নামেও অভিহিত করেছেন।" (পাণ্ডুলিপি পঠন সহায়িকা, পৃ.৫৮-৫৯)

১৭১৮ সালে লেখা কবি শাকের মাহমুদের 'মধুমালতি' কাব্যে দেখা যায়-

"মধুমালা মনোহর কিতাব নিকটে।
পাইয়া পাচালী রুচি কহিলাম ঝটে।।
একাদশ শত সাল উন অষ্ট আশি।
ফারছী বাঙ্গালা ভাষা হৃদয়ে প্রকাশি।।"


বোল্ড করা অংশ লক্ষণীয়।

এবার শাকের মাহমুদের অনেক আগে আরেক বিখ্যাত কবি আবদুল হাকিম সতের শতকের গোড়ার দিকে তাঁর রচিত 'সিহাবুদ্দীন নামা' কাব্যে কী লিখেছেন দেখা যাক-

"ফারছী এলেম হএ আরবী তনএ।
আরবী অনুরূপ তাই ফারছী লিখএ।।
হিন্দুশাস্ত্র পুস্তক যে ফারছীর নন্দন।
পুস্তক লিখএ জত ফারছীর বিবরণ।।"


এখানে হিন্দুশাস্ত্র বলতে কবি হিন্দুদের রচিত বাঙালা পুস্তকের কথা বলেছেন।

উনিশ শতকের গোড়ার দিকের একটি চমৎকার সংস্কৃত অভিধান লিখেন রাজা রাধাকান্ত দেব। অভিধানটির নাম 'শব্দকল্পদ্রূম'। এ অভিধানের পরিশিষ্টে বলা হয়েছে-

"বঙ্গবিদ্যাতথা হিন্দিং পারসিং মারবীং ততঃ ।"


অর্থাৎ- বাঙালা ভাষা হিন্দী, ফারছী ও আরবী শব্দময়।

এবার তের শতকের আগে, কারো মতে, একাদশ শতকে রামাই পণ্ডিতের 'শূণ্যপুরাণ' কাব্যে ধর্ম-পূজা বিধান-এ "কলিমা জাল্লাল"-এর ভাষাটা কেমন ছিল তা দেখা যাক-

"ওলন্তের মাল পড়িছে বিহান।
কাটিছেন খনকার তির কামান।।
সুরৎ ঘোড়াকা পিষ্ঠে জিন পালান।
বার দিয়া বসিলেন খোদায় পরমান।।
উচ্চালন্তি কাগজ বিচারন্তি পোথা।
আদি জনম খনকার হইল কোথা।।
মারিয়া দুশমন কা সির।
বাদশা দিলেন মহামুদ বির।।
কে হিদূ কে মছলমান।
হিন্ধু পুজন্তি কাষ্ঠ পাশান।।
মূছলমান পুজন্তি খোদায়।
পূর্ন্ন রূপরেক নাই।।...."





ওয়ারেছ আম্বিয়ার একটি পাতার কিয়দংশ দেখুন। মৌলবী আবদুল আজিজ ১৬১০ খৃ. এ গ্রন্থটি রচনা করেন। এখানে ভাষার গঠন ও বর্ণনাভঙ্গী লক্ষণীয়।

এবার সমাচার দর্পণ পত্রিকার দুটো কোটেশনে কী লেখা আছে, সেটা দেখা যাক-

এক.
"First and for foremost the haughtiness of the Javans- will be brought low, which will be Much service to us. When the Bengali language is brought to use the Mussalmans will be driven out, for there not and never will be able to read and write Bengali."

অর্থ- (ফারছী-বাঙালার বদলে সংস্কৃত-বাঙালা এবং সরকারী ভাষা ফারছীর বদলে ইংরেজী চালু হলে-) 'প্রথম এবং প্রধানতম (উপকার এই হবে) যে, যবনদের হামবড়াভাব কমে যাবে; যা আমাদের মহা উপকারে আসবে। তখন (এই সংস্কৃত-) বাঙালা ভাষার ব্যবহার থেকে মুছলমানরা বিতাড়িত হবে। কারণ (তারা এই বাঙালা ভাষা) কখনও লিখতে এবং পড়তে পারবে না।'

দুই.
"With Sanskrit are associated the days of India's greatest glory, with Persian and Arabic the days of her defeat, humiliation and bondage. The budding patriotism of Hindu everywhere is therefore naturally eschew Persian and Arabic words as badges of slavery in the long run, however considerations of utility are sure to override more sentimental predilections."

অর্থ- (সংস্কৃতের প্রতি অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে, এ-কারণে যে),-'সংস্কৃতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভারতের মহোত্তম গৌরবময় দিনগুলোর (কথা; পক্ষান্তরে) আরবী-ফারছীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে- ভারতের পরাজয়, অবমাননা এবং দাসত্বের (স্মৃতি)। সুতরাং সর্বত্র অঙ্কুরিত হিন্দু-দেসাত্ববোধের (এই সময়ে) স্বাভাবিকভাবেই আরবী-ফারছী শব্দ দাসত্বের বন্ধন বলে বিবেচিত। অতএব প্রায়োগিক বিবেচনায় ভবিষ্যতে অবশ্যই আমাদের বিশেষ ভাবালুতা বর্জন করতে হবে।" (ব্যবহার করতে হবে- নতুন ভাষা, নতুন বাঙালা তথা সংস্কৃত-বাঙালা)।

(বাঙালীর লিপি ভাষা বানান ও জাতির ব্যতিক্রমী ইতিহাস, পৃ.১৩)

ভাষা বদলের কারণ বলতে গিয়ে ঢাবি'র বাঙলা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. লুৎফর রহমান তার বইয়ে এই কোটেশন দিয়েছেন।

এখানে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। আপনারা খোলামেলা আলোচনা করেন এবং নতুন কোন তথ্য থাকলে শেয়ার করেন।

সোমবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১১

টি-শার্টে চিকা মারা







এক সময় টি-শার্টে চিকা মারা নেশা ছিল। তখন হাতে ফেব্রিক কালার দিয়ে করতাম। পরে অন্য কাজে ঢুকে পড়ায়, এটা আর হয়ে ওঠেনি।

এখন ভাবছি, আবার একটু আধটু করব।

সেই ভাবনায় একটা নকশা করলাম।