সোমবার, ২৫ জুন, ২০১২

শিল্পকর্ম তৈরির একটা গোপন কৌশল




ছবি আঁকার আগে শিল্পী হৃদয়ে একটা চিত্র এঁকে ফেলেন। প্রায়সই দেখা যায় ক্যানভাসে আঁকা শেষে অন্য একটা কিছু দাড়িয়ে গেছে। কখনও কখনও শিল্পী নিজেই তা দেখে চমকে ওঠেন।

(আমি সেরকম কোন শিল্পী না হলেও লেখার ভেতর এমন কিছু হতে পারে তা টের পাইলাম আজ। কি লিখতে বসে এটা কি লিখলাম।)

আমি চিন্তা করছিলাম মিনিয়েচার নিয়ে কিছু লিখব। কিন্তু একটা ছবি দেখে মনে হল, শিল্পী কেন এভাবে আঁকেন? নেটে গুতোগুতি করে যা পাইলাম তা এরকম।

সৌন্দর্য ব্যাপারটার সাথে ভাল লাগা জড়িত। প্রশ্ন হল একটা শিল্পকর্ম কেন ভাল লাগে?

এই ভাল লাগার জন্য শিল্পী তার কাজে কিছু কৌশল অবলম্বন করেন। অনেক কৌশলের ভেতর একটা গোপন টেকনিক হচ্ছে গোল্ডেন রেসিওর ব্যবহার। গোল্ডেন রেসিও সম্পর্কে আমরা কম-বেশি সবাই জানি। প্রকৃতিতে এর ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে।

তবে আর্টে এই রেসিওর ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। শিল্পী এমনভাবে আঁকেন যেন তার শিল্পকর্ম দর্শককে বলে, আমি তোমাকে দেখাতে চাইনা কিন্তু তুমি আমাকে মুগ্ধ হয়ে দেখো।

এই যে লুকোচুরি খেলা, এটা সার্থকভাবে শিল্পকর্মে ফুটিয়ে তোলার জন্য শিল্পী গোল্ডেন রেসিওর ব্যবহার করে থাকেন।



যারা ডানহাতি আর্টিস্ট তাদের ছবিতে ডান পাশে মূল কেন্দ্রবিন্দু চলে আসে হৃদয় থেকে। তবে শিল্পী ইচ্ছাকৃত এই মূল বিন্দুকে বিভিন্ন স্থানে বসিয়ে নিরীক্ষা করে থাকেন।



প্রকৃতিতে এই ফিবনাক্কি মজাটা অনেক রয়েছে। এতে সৌন্দর্য্যের মনিমুক্তা আমাদেরকে মোহিত করে।



মোনালিসা আঁকতে গিয়ে ভিঞ্চি এই সূত্র প্রয়োগ করেছিলেন বলে কোথাও উল্লেখ দেখা যায় না।

কিন্তু এখানে কেউ সেটা বসিয়ে ভাব নিয়েছে, দেখো.. মোনালিসা এত সুন্দর লাগার পেছনে এই হচ্ছে রহস্য।

হাহাহা...আসলে এটা মজা হলেও ছবিটাতে মূল বিন্দু থেকে ছড়িয়ে পড়ার ভেতর যে পারস্পরিক সম্পর্ক থাকে, যেমন টেনশন বা প্লাস্টিসিটি যাই বলিনা কেন, তা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একাডেমিক শিক্ষায় আমরা যা শিখি, পরবর্তি মুক্ত জীবনে এসে শিল্পের সেই উপকরনগুলো মনের অজান্তেই প্রয়োগ হতে থাকে।

মডার্ণ আর্টিস্টদেরকে এই গোল্ডেন রেসিও প্রভাবিত করে বিভিন্নভাবে। জোসেফ স্তেলা(J o s e p h S t e l l a
) সাম্প্রতিক এরকম কিছু কাজ করেছেন। একে তিনি ফিবোনাক্কি সিরিজও বলেছেন।



বাংলাদেশে আর্টিস্টরা এরকম কাজ করেছেন। চারুকলায় গেলে তা দেখা যায়। এটা একটা কমন বিষয়। তেমনি ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিংয়েও এটা দেখা যায়। আজ এরকম একটি কাজ আমার নজরে পড়ল। ক্যালিগ্রাফার মোহাম্মদ আবদুর রহীমের 'ঐক্য' নামে একটি ক্যালিগ্রফি পেইন্টিং দেখেন।



এক্রিলিকে করা এ পেইন্টিংটাতে একটি ঘরের আকৃতিতে 'আল্লাহ' লেখা। ক্যালিগ্রাফার হয়ত বুঝাতে চেয়েছেন ঐক্যের মূল বিন্দু বা ফোকাস আল্লাহ হতে পারেন। আবার এটা কাবা ঘরের মত মনে হতে পারে, কাবা মুসলমানদের ঐক্যের প্রতিক। যাইহোক, আসলে এটাতে মূলবিন্দুকে উপস্থাপণের ব্যাপারে ফিবোনাক্কি বা গোল্ডেন রেসিও থিউরির একটা প্রভাব দেখা যায়।



তার আরেকটা ক্যালিগ্রাফি 'সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আলা' সুলুস শৈলিতে করা। এখানে ক্যালিগ্রাফি পড়ার শুরুটা দেখানো আছে। আসলে ওটাই হচ্ছে ক্যালিগ্রাফির মূল ফোকাস বিন্দু। মজার বিষয় হচ্ছে, এতেও গোল্ডেন রেসিওর প্রভাব রয়েছে বলে মনে হয়।

আজ এই পর্যন্ত।

ছবি- নেট থেকে।

শনিবার, ২৩ জুন, ২০১২

পাখি...... আয় ফিরে আয় (উৎসর্গ বিভা)




দুই.
তুলো মেঘ ছুঁয়ে তোর আর কত সুখ
এই বুকে দেখ কত মেঘ ভরা দুখ
জ্যাকসন হাইট্স কি স্বপন ভূমি
ওরে এই মধুমতি তোরই সুখ-দুখ



তিন.
বাঁশবাড়ি গাঁয় এক সুকপাখি গায়
বিমর্ষ বাতাস শুধু হাহাকার তোলে
চাতকের বুক ফাটে নিদ্রাহার ভোলে
আরতো পারিনা পাখি আয় ফিরে আয়






ছবি- নেট থেকে

কাজল দিঘীর টানে....(উতসর্গ বিভা)



এক.
ভোরের হাওয়া পালিয়ে এসে গুবাক সারির মাঝে
উতল হল শিরীন নামের দস্যি মেয়ের সাজে
সুকসারিদের জটলা কেন, কে দেয় মনে দোলা
আনমনে এক কিশোর মনে নকশি রুমাল তোলা
---------------



চার.
তার কাজল চোখের দিঘীতে একদিন উঠেছিল ঢেউ
তারপর কত যে ফাগুন গেল, সর্ষে খেতের হলুদ গানও
সন্ধ্যা তারার টুপ করে ঝরে পড়া আর সোনালি বিকেল
এখানে বিবর্ণ আকাশ কেন বসে বসে মনে করে কেউ




ছবি- নেট থেকে...

বৃষ্টিবেলা





আঁধার ঘনায়ে আসিছে....মেঘ করেছে খুব ভারি
ওরে ঘরে ধান তুলে নে এইবেলা তাড়াতাড়ি
আদুরির বাছুর ডাকাডাকি করে ঝপ করে দেয়া নামে
সেদিন কোথায় হারাল জানিনে হৃদয়ের কোন খামে







ছবি-নেট থেকে

মিনিয়েচার আর্ট : শিল্প আধ্যাত্মের সম্মিলন




মিনিয়েচার। আর্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা।

ছোট ছবি কিন্তু তাতে রয়েছে ঐতিহ্যের ছোঁয়া। সম্পূর্ণ নিজস্ব আইডেন্টিটি হচ্ছে মিনিয়েচার আর্টের অন্যতম মূল বৈশিষ্ট্য। মিনিয়েচার আর্টে প্রাচ্যকলা স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। পাশ্চাত্য এ শাখায় জৌলুস হারিয়ে এখন দীনহীন টিমটিম করে জ্বলছে।

এখন মিনিয়েচার আর্ট আবার পুনর্জীবন ফিরে পেতে চলেছে। বিশেষ করে ইসলামিক মিনিয়েচারে কোন কোন সরকার প্রমোট করছে।

পাশ্চাত্য মিনিয়েচার আর্ট

পশ্চিমা বিশ্বে মিনিয়েচার আর্ট বেশি দিনের পুরনো নয়। ১৩ শতকের শেষ ভাগ থেকে মিনিয়েচার আর্ট হতে থাকে। বলা যায়, প্রাচ্যকলার এই গুরুত্বপূর্ণ শাখা থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে পশ্চিমা শিল্পীরা এটা করতে শুরু করেন। মূলত তারা পোট্রেট মিনিয়েচার আঁকতেন।


Jean Fouquet, self portrait in 1450

উইকিতে এটাই প্রাচীন নমুনা হিসেবে পাওয়া গেছে।


Portrait Miniature of Margaret Roper. Bodycolour on vellum mounted on card, 4.5 cm diameter, c. 1536

নিউ ইয়র্কের মেট্রোপলিটান মিউজিয়াম অব আর্টে সাড়ে চার সেন্টিমিটার বৃত্তের এই মিনিয়েচার আর্ট সংরক্ষিত।


Miniature painting (A Bacchante), 1799

দিনে দিনে পাশ্চাত্য শিল্পীরা এ শাখায় ভালই উন্নতি করে।



প্রাচ্যকলার সুক্ষ্ম প্রভাব রয়েছে এই পাশ্চাত্য মিনিয়েচারটিতে।


woman-black-dog. Terry Furchgott

সম্প্রতি মার্কিন আর্টিস্ট টেরি ফারগট যে মিনিয়েচার আঁকছেন তাতে প্রাচ্যকলার মিনিয়েচারের প্রবল প্রভাব রয়েছে।


Terry Furchgott


প্রাচ্যকলার মিনিয়েচার

প্রাচ্যকলায় মিনিয়েচার অসাধারণ এক দক্ষতা আর নিপুনতার স্মারক। হাজার বছর ধরে এই শিল্প উৎকর্ষতার এমন এক পর্যায়ে এসে পৌছেছে, যাতে শিল্পের সুক্ষ্ম রস আধ্যাত্মিকতার অনুভবে গিয়ে মিশেছে। শিল্পী তার তুলিকে এত সুক্ষ্ম আর নিখুঁত করে চালিয়েছেন যেখানে আতশি কাচ দিয়ে এর বিশ্ময়কর আঁচড় দেখে অভিভূত হতে হয়।



বাদশাহ আকবরের জন্য এ মিনিয়েচারটি করা হয়েছিল।




মজার একজোড়া গাছের মিনিয়েচার। বলা যায়, দম্পতি।




লাল গালিচা সংবর্ধনা

মিনিয়েচারে প্রতিকের ব্যবহার

মিনিয়েচারে দর্শন এসেছে ক্ষমতা আর জৌলুসের বার্তা নিয়ে। ক্ষমতাসীনরা শিল্পকলায় বরাবর তাদের মহাত্ম আর গৌরব প্রকাশ করতে সুপ্ত বাসনা লালন করেছেন। শিল্পীরা সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে রাজসভায় উচ্চপদ বাগিয়েছেন।



এটাকে বলে শামসী। অর্থাৎ সূর্য। শক্তির এই প্রতীক কত নান্দনিক হয়ে ফুটে উঠেছে এখানে।

ইসলামিক মিনিয়েচার
মুসলিম বিশ্বে এখন মিনিয়েচার করা হচ্ছে ভিন্ন আঙ্গিকে। এতে প্রাণীচিত্রকে সচেতনভাবে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে।



হাশিয়া




শামসী



দুয়া



হাশিয়া ও দায়েরাহ


বাংলাদেশে মিনিয়েচার

বাংলাদেশে মিনিয়েচার আর্ট আসে মোগলদের হাত ধরে। কিন্তু সে ধারা অব্যাহত থাকেনি। এখন নতুন করে আবার মিনিয়েচার আঁকা শুরু হয়েছে। ক্যালিগ্রাফির সাথে মিনিয়েচার আঁকার বিষয়টি ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি অঙ্গনে খ্যাতনামা ক্যালিগ্রাফার মোহাম্মদ আবদুর রহীমের মিনিয়েচার এবং হাশিয়া (বর্ডার আর্ট) দেশে-বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে।

তার কয়েকটি মিনিয়েচার:



মহামহিম পরওয়াদেগার



আয়তাল কুরসি

আলজেরিয়া মিনিয়েচার ফেস্টিভালে এ দু'টো শিল্পকর্ম প্রশংসা পেয়েছে।

তার সাম্প্রতিক আরেকটি মিনিয়েচার শিল্পকর্ম


শামসী



অসীমের অনুভব


মিনিয়েচার আর্ট হচ্ছে আবেগ ও চরম ধৈর্যের সম্মিলন। যারা এটা করেন তাদের এটাতে এতই মগ্ন হতে হয় যে পৃথিবীর কোন খবর তাদের কাছে থাকে না। এটা আসলেই শিল্প আধ্যাত্মের এক অপূর্ব সম্মিলন।


ছবি-নেট থেকে