বুধবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

মোহাম্মদ জাকারিয়া : ক্যালিগ্রাফি যার প্রেম....



এই ডাকটিকেটটি ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডাক বিভাগ প্রকাশ করে। মুসলমানদের ঈদ উৎসব উপলক্ষে ঈদ মুবারক কথাটা আরবি ক্যালিগ্রাফির সুলুস শৈলিতে নকশা করেন আমেরিকার একজন জনপ্রিয় ক্যালিগ্রাফার।

তার নাম মোহাম্মদ জাকারিয়া (Mohamed Zakariya) (আরবিতে- محمد زكريا‎)। তিনি ১৯৪২ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ভেনচুরায় জন্মগ্রহণ করেন।


Mohamed Zakariya is a master of Arabic calligraphy. He was born in 1942 in California and trained as an aerospace engineer. In 1961, at the age of 19, a holiday to Morocco changed his life and career. He was fascinated by the culture, religion and language. Zakariya returned to Southern California, and began to learn the Arabic language and to study Islamic calligraphy. He later converted to Islam


বর্তমান সময়ে বিশ্বখ্যাত ক্যালিগ্রাফারদের অন্যতম মোহাম্মদ জাকারিয়া। জীবনের প্রথমদিকে এ্যারোস্পেস প্রকৌশলী হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলেও ১৯ বছর বয়সে তার জীবনে মোড় ঘুরে যায়। এ সময় এক ছুটিতে তিনি মরক্কো বেড়াতে আসেন। তার ভেতরে ছিল শিল্পসত্ত্বা, তিনি মরক্কো এসে আরবি ক্যালিগ্রাফি দেখে এতটাই অভিভূত হন যে, এটার প্রেম তার জীবন এবং পেশাকে বদলে দেয়। আরব সংস্কৃতি, ইসলাম এবং আরবি ভাষা তাকে বিমুগ্ধ করে তোলে। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া ফিরে তিনি আরবি ভাষা শিখতে শুরু করেন এবং ইসলামি ক্যালিগ্রাফি হাতে-কলমে আয়ত্ব করা শুরু করেন।

পরে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।



ক্যালিগ্রাফির প্রতি তার প্রেম আর অধ্যাবসায় এতটা গভীরতা লাভ করে যে, এই শিল্পকলার তত্ত্বীয় ও প্রয়োগিক জ্ঞান লাভের জন্য মরক্কো, স্পেন, ব্রিটিশ মিউজিয়াম ও তুরস্কের ইসলামি আর্ট, ইতিহাস ও সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্রে গমণ করেন।

ওয়াশিংটন ডিসির ফ্রির গ্যালারির ইসলামিক আর্টের কিউরেটরের পরামর্শক্রমে তুরস্কে গিয়ে তিনি ক্যালিগ্রাফির দীক্ষা নেন। ১৯৮৮ সালে তুরস্কে বতর্মান ক্যালিগ্রাফির জীবন্ত কিংবদন্তি উস্তাদ হাসান চালাবির নিকট ক্যালিগ্রাফি শেখা শুরু করেন। ১৯৯৭ সালে চালাবি তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সুলুসনাশখ শৈলির মাস্টার ক্যালিগ্রাফারের সনদ 'ইকাজেট' প্রদান করেন। ক্যালিগ্রাফির বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ এ্যাডভ্যান্স ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন।

তিনি তুরস্কের আরেক বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার ড. আলি আল্পসারানের কাছ থেকে তালিক শৈলিতে ইকাজেট লাভ করেন।

১৯৭২ সাল থেকে তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাস শুরু করেন। এরপর তুরস্ক এবং মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে তার ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্মের প্রদর্শনি এবং এ বিষয়ে বক্তৃতা করেন।




তিনি ১৯৮৭ সালের প্রথম আন্তর্জাতিক ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতায় জালি সুলুস শৈলীতে একটি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৩ সালে ৩য় প্রতিযোগিতায় তিনি একই শৈলীতে ইনসেনটিভ পুরস্কার লাভ করেন। একমাত্র মার্কিন মুসলিম নাগরিক হিসেবে ক্যালিগ্রাফিতে তুর্কী ডিপ্লোমা “ইযাজেত” অর্জন করেন। তিনি আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্যালিগ্রাফির ওপর শিক্ষা প্রদান করেন।

ক্যালিগ্রাফির ওপর লেখা তার দুটি মূল্যবান গ্রন্থ রয়েছে। বই দু’টির নাম হচ্ছে, দ্যা আর্ট এবং অবজার্ভেশনস অন ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি



২০০২ সালে তার নির্মিত ডকুমেন্টরি "Muhammad: Legacy of a Prophet" (2002) প্রচারিত হয়।




তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইসলামি ক্যালিগ্রাফির বিশিষ্ট দূত হিসেবে বিবেচিত।


জাকারিয়ার একটি বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফি।


ক্যালিগ্রাফিটি সুলুস শৈলিতে করা হয়েছে। আরবি টেক্সট হচ্ছে- আলাইসাল্লাহু বিকাফিন আবদুহ। অর্থ- আল্লাহ কি তার বান্দার জন্য যথেষ্ট নন?

আপনারা চাইলে জাকারিয়ায় ওপর একটি চমৎকার ডকুমেন্টরি দেখতে পারেন-









ছবি- নেট থেকে মারিং

মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

বাঙলা 'পয়ার' শব্দের বাড়ির খোজে....



কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ছন্দ বিষয়ক একখানা বই আছে। নাম 'ছন্দসরস্বতী'। বইটিতে একটি রূপক গল্প-


"নবজলধর কান্তি একজন পুরুষ ঘরের ভিতর প্রবেশ ক'রে আমায় মধুর গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন- 'কি জানতে চাও?' আমি আমার প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলুম।

তিনি বিজ্ঞভাবে ঘাড় নেড়ে বললেন, 'অলবড়ি।....অলবড়ি কাকে বলে জানো? যে সমস্ত পদ্যপংক্তিতে চারটি করে পংক্তি-পর্ব থাকে, তাকে বলে অলবড়ি। তোমাদের পয়ারেও তাই, লাচারিতেও তাই; ছড়ার ছন্দেও তাই, পুঁথির ছন্দেও তাই; কাজেই মূলে দুই-ই এক। অলবড়ি শব্দের অপভ্রংশ হচ্ছে লাচাড়ি।'

হঠাৎ অমৃত-সাগরণের কথায় বাধা দিয়ে কে একজন বলে উঠলেন- 'কিহে? ভুল শেখাচ্ছ কেন!'

অমৃত-সাগরণ বললেন- 'কে হে। সৈফি মিঞা যে। তুমি এসে জুটেছ? তুমি কি বলতে চাও?'

কপালে রেশমী রুমাল বুলিয়ে মুসলমান ভদ্রলোকটি বললেন- 'বলতে চাই যে লাচাড়ি শব্দ ফার্সী লাচার শব্দ থেকে এসেছে। লাচারেরা যে ছন্দে গান গেয়ে বা ছড়া বলে ভিক্ষে ক'রে বেড়ায়, সেই হচ্ছে লাচাড়ি ছন্দ, যেমন লাচাড়ি তোড়ি মানে লাচার বা ভিখিরীদের মুখে মুখে তোড়ি রাগিণীর যে নতুন চেহারা দাঁড়িয়েছে, সেইটি। আর পয়ার হ'ল আরবী বয়েৎ শব্দের অপভ্রংশ।'

অমৃত-সাগরণ অদ্ভুতভাবে ঘাড় নাড়লেন। সৈফী মিঞা বিরক্তির স্বরে বললেন- 'কি? 'হাঁ' বলছ, না 'না' বলছ? তোমার ও মাদ্রাজী ঘাড়-নাড়ার কোনো হদিস পাইনে ব্রাদার।'

'না বলছি, - নিশ্চয়ই 'না', বয়েৎ থেকে পয়ার। তুমি হাসালে দেখছি। পয়ার এসেছে তামিল ছন্দ 'পরাণী' থেকে।'

'হুঃ। তাহলে আসামীরাও বলতে পারে যে লাচারড়ি হয়েছে তাদের লেচার শব্দ থেকে- যার মানে চলার ঝোঁকে হাতের ঝাঁকি।'

'কি রকম?'

'রকম আবার কি?'

'বাংলায় তামিল আগে? না তুর্কী আগে?'

'বাংলায় ফার্সী কথা বেশী? না দ্রবিড় কথা বেশী?'

'দ্রবিড়।'

'কি রকম?'

'যেমন বহুবচনের 'গুল্যে' শব্দ, আমাদের 'মরম-গল, বাংলায় হয়েছে 'গাছগুলো'।

'বেশ; কিন্তু অপর দিকটাও দেখছ না কেন? বাংলায় ক্রিয়ার ভিতরেও যে মুসলমানী ঢুকেছে- আমাদের 'কম' থেকে যে 'কমানো' হয়েছে তা' জানো? তোমাদের বেশী প্রভাব, না আমাদের।'



পয়ার ছন্দ কি? তা পড়তে গিয়ে মনে হল, শব্দটি কোথা থেকে এল?

পুথির বিশেষ করে বঙালদের লেখা পুথিতে পয়ার ছন্দের একচ্ছত্র আধিপত্য দেখে মনে কৌতুহল জেকে বসায় এ খোজাখুজির কসরত।

প্রথমে ভারতীয় বাঙালা থেকে প্রকাশিত "সংসদ/বাঙালা অভিধান"-এ 'পয়ার' শব্দটি পাওয়া যায়। অভিধানটি সংকলন ক'রেছেন শৈলেন্দ্র বিশ্বাস। আর সংশোধন/অনুমোদন ক'রেছেন- ড. শশিভূষণ দাশগুপ্ত ও দীনেশচন্দ্র ভট্টাচার্য। অভিধানে এ ব্যাপারে লেখা হয়েছে- 'পয়ার' বি-চতুর্দ্দশাক্ষর ছন্দ। বাংলা পদ্যে সর্বাধিক প্রচলিত (যেমন- 'মহাভারতের কথা অমৃত সমান;- কাশী)। [সং-পদকার]।" অর্থাৎ শৈলেন্দ বিশ্বাসের মতে, বিশেষ বাচক এ শব্দটি সংস্কৃতজ। এসেছে সংস্কৃত পদকার থেকে।

কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, যারা শব্দ নিয়ে নাড়াচাড়া করেন, তারা জানেন 'পদকার' একটা শব্দ নয়। সংস্কৃতও নয়।
'পদ' ও 'কার' দুটি শব্দ। আর তা ফারছীমূলক।
ফারছী ভাষার অভিধানে দেখা যায়- 'পদ' শব্দের মূল 'পা' অর্থ 'চরণ'। সেটা মানুষ বা জীব-জানোয়ারের চরণ(পা-পদ), অফিসিয়াল 'পদ' কিংবা কবিতার পংক্তি(পদ/চরণ) যে কোন অর্থ হতে পারে। আর 'কার' অর্থ-কাজ,শ্রম,চাকরি ইত্যাদি। কবিতা রচনা করাও একটা কাজ। তাই পদকার কোনমতেই সংস্কৃত শব্দ নয়। বাঙলায় প্রচুর 'কার' ফারছী প্রত্যয় ব্যবহারের নজির আছে। তাই 'পদকার' অর্থ 'পয়ার' নয়। পদকার অর্থ- কবি। অর্থাৎ যিনি কবিতার 'চরণ' বা 'পদ' রচনা করেন।

অনুরূপ ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হকের বাংলা একাডেমী(হওয়া উচিত ছিল 'বাঙলা একাডেমি' তাদের নীতিমালা অনুযায়ী) ব্যবহারিক বাংলা অভিধান-এ 'পয়ার' অর্থ-বি চতুর্দশাক্ষর ছন্দবিশেষ। {স. পদ+চার>} ।

এখানেও শব্দমূল সংস্কৃত বলা হয়েছে। কিন্তু আসলে তা নয়, পদ+চার শব্দদ্বয়ও ফারছী থেকে এসেছে। পদ সম্পর্কে উপরে বলা হয়েছে। আর ফারছী চাহার>চার এসেছে।

পয়ার সম্পর্কে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, 'সংস্কৃত বাংলা এবং প্রাকৃত বাংলা'র মধ্যে পয়ার প্রাকৃত বাংলার ছন্দ।' কিন্তু তিনি উৎস নিয়ে কোন কথা বলেননি।

তেমনিভাবে অনেক বিখ্যাত লেখক ও শাস্ত্রবিদের গ্রন্থে পয়ার নিয়ে আলোচনা থাকলেও এটার উৎসমূল নিয়ে আশাব্যাঞ্জক তথ্য মেলেনা। কিন্তু শব্দটি ভূঁইফোড় ত হতে পারে না।

এবার প্রথম রূপক গল্পটির শব্দ 'আলবড়ি' নিয়ে একটু চিন্তা করা যাক। তামিল 'আলবড়ি' শব্দটি আরবি 'আলবহরি' থেকে এসেছে। আরবি ছন্দশাস্ত্রে আলবহরি একটি বিশেষ ছন্দ। ইলমুল আরূদ বা আরবি ছন্দবিদ্যায় এটা পাওয়া যায়। যার চারিত্র আলবড়ি'র মত।

অনুরূপ ফারছীতে প আরবিতে ব উচ্চারণ হয়। বহার>পহার>পয়ার।

মজার বিষয় হল, প্রাচীন পুথিতে ১০ম শতাব্দির আগে পয়ার ছন্দের প্রয়োগ লক্ষ করা যায় না।

আপনাদের কারো কাছে যদি কোন তথ্য থাকে, তাইলে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।

ছবি- নেট থেকে মারিং

রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

মমতা দিদি, বাঙালির হৃদয় ভাঙবেন না!



আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত যে সাহায্য-সহায়তা করেছে, তা তুলনাহীন। এজন্য আমার কৃতজ্ঞ। বিশেষকরে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার এবং জনগণের অবদানের কথা আমরা ভুলব না।

দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে নানান অসঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও ভারতের সাথে আমরা সুসম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যদিও উজান (ভারত) থেকে আমাদের ন্যায্য পানির হিস্যা আমরা পাচ্ছিনা। দু'দেশের বিশাল বাণিজ্য বৈষম্য বেড়ে চলেছে। কারণে অকারণে নসিয়তও পাচ্ছি। সীমান্ত হত্যা অসহনীয় পর্যায়ে পৌছে যাওয়া সত্ত্বেও ভারতকে আমরা বন্ধু ভাবতে চাই।

আমরা ভারত থেকে সর্দি-কাশির আরাম ফেন্সিডিল পাচ্ছি। গরুখেকো বাঙালির মাংসের জোগান আসছে ভারত থেকে। আনন্দ উৎসবে ভারতীয় নৃত্য-গীত শিল্পীরা এসে মাতিয়ে দিচ্ছেন আমাদেরকে। আমরা তৃপ্ত।

সাংস্কৃতিক বন্ধন বরাবর আমরা দৃঢ় করতে চেয়েছি। এমনকি অসমছালা অনুষ্ঠান দেখা ছাড়া এখন আমাদের রাতের খাবার হজম হচ্ছে না। আমাদের সিনেমা-নাটক কলকাতায় ঠাই না পেলেও আমরা কলকাতার সিনেমা ঢাকার সিনেমাহলগুলোর জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। কলকাতার পত্র-পত্রিকা আর সাহিত্যকে আমরা দুহাত বাড়িয়ে গ্রহণ করে চলেছি। আসলে আমরা বন্ধুত্বের বন্ধন দৃঢ় রাখতে চাই।

কিন্তু এখন কেন যেন মনে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আমাদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ফিকে করতে চাচ্ছে। তিস্তার পানি আমাদের ন্যায্য অধিকার। কিন্তু মমতা দিদি বেঁকে বসলেন। আমাদের তরফে বহু রকম নজরানা পেশ করেও তিস্তা চুক্তি হল না। আমাদের মনি আপা কতশত কোশেশ করলেন। কিন্তু মমতা দিদির মন গলাতে পারলেন না।

আজ খবর পেলাম, বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তের বেনাপোল-পেট্রাপোল ‘নো ম্যান্স ল্যান্ডে’ দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসা ভাষা দিবসের যৌথ অনুষ্ঠানটাও মমতা দিদি বন্ধ করে দিয়েছেন।

২১ ফেব্রুয়ারির ওই অনুষ্ঠানে দু’ দেশের শিল্পী ও মানুষের ব্যাপক উপস্থিতিতে সেখানে একটি মিলনমেলার সৃষ্টি হয়ে আসছে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ‘ভারত-বাংলাদেশ গঙ্গা পদ্মা ভাষা ও মৈত্রী সমিতি’ এই অনুষ্ঠানের আয়োজক এবং দু’ দেশের স্থানীয় প্রশাসন তাতে সহযোগিতা করতো।


পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও গাইঘাটা এলাকার বিধায়ক ও মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাধায় অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

বেনাপোল ও পেট্রাপোল সীমান্তে জিরো পয়েন্টে গত ২০০৫ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মহান একুশে পালনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। দু’ দেশের ঐতিহ্য , পরম্পরার বার্তাও দেওয়া নেওয়া এই অনুষ্ঠানে।

সীমান্তে জিরো পয়েন্টের এপারে একটি মঞ্চ হয় এবং অন্য প্রান্তে আরেকটি মঞ্চ। পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীরা ওপারের মঞ্চে গিয়ে এবং বাংলাদেশের শিল্পীরা ভারতের মঞ্চে এসে গান, নৃত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন।

যৌথ আয়োজক কমিটির সভাপতি ভারতের সাবেক এমপি অমিতাভ নন্দী এবং সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশের এমপি আলহাজ শেখ আফিল উদ্দিন।

আইন-শৃঙ্খলার কথা বলে এটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।


আমরা জানিনা কেন এসব ব্যাপার ঘটছে। বাংলাদেশের জনগণ বন্ধুত্বে বিশ্বাসী। আশাকরব এসব অস্বস্তিকর ব্যাপার কেটে যাবে এবং আমাদের সম্পর্ক এগিয়ে যাবে।

ছবি- নেট থেকে

শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

বঙাল এবং বঙ্গ বিষয়ক ভাবনা

বাঙলা শব্দটি প্রথম কোন প্রাচীন সূত্র থেকে এল, সেটা নিয়ে খোজাখুজি করছিলাম। নেটে তেমন কিছু পাওয়া গেল না।

বইপত্র ঘেটে কিছুটা চিন্তা-ভাবনার খোরাক পাওয়া গেল।

বাঙলা ভাষা, বাঙলা দেশ, বাঙালী।
এই তিনটি বিষয় নিয়ে একটু প্রাচীন সূত্র ঘেটে দেখা দরকার।

প্রাচীনকালে বাঙালা ভূখন্ড বলে যাকে চিহ্নিত করা হত, তার নাম ছিল বঙ্গাল, বঙাল বা বাঙালা।

চর্যাপদের কবি ভুসুকুপাদানাম-এর কবিতায় দেখতে পাওয়া যায়-

বাজ নাব পাড়ী পউআঁ খালে বাহিউ।
অদঅ বঙাল দেশ লুড়িউ।।


ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চর্যাপদে মীননাথ ভণিতায় প্রাপ্ত পদটি ধরে বলেছেন মীননাথের সময়কাল সপ্তম শতক।
কারণ মীননাথ এবং মৎস্যেন্দ্রনাথ একই ব্যক্তি এটা ইতিহাসে প্রমানীত হয়েছে।

অন্যদিকে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের ভাষা বৈশিষ্ট্য হতে চর্যাপদের ভাষা দেড়শত বছরের পুরাতন। তিনি চর্যাপদের রচনাকাল ৯৫০ হতে ১২০০ সালের মধ্যে নির্দিষ্ট করেছেন।

যাই হোক বঙাল দেশ বলে একটা দেশ ছিল, তা আমরা চর্যাপদের ২৪ কবির এক কবি ভুসুকুপাদাম-এর কবিতায় খুজে পেলাম।

চর্যাপদের কবিদের জন্মভূমি কোথায় ছিল? কবিতাটা খেয়াল করলেই জবাব পাওয়া যায়, বঙাল দেশ ছিল তাদের মাতৃভূমি।

এবার একটু ভিন্ন কথা নিয়ে আলোচনা করি, স্বাধীনতা-উত্তরকালে ডাক টিকেট বাংলা দেশ শব্দটা বাংলা এবং দেশ আলাদা করে লেখা ছিল। অর্থাৎ বাংলা নামে একটি প্রাচীন ভূখন্ড ছিল, যাকে বাঙলা, বাঙ্গালাহ, বঙাল বলে ১৮ শতক পর্যন্ত ঙ দিয়ে লেখা হয়েছে। কবি রবীন্দ্রনাথই প্রথম গানে ধ্বনিঘাত ঠিক রাখতে বাংলা লিখেন। ঙ অক্ষরে ং+গ ধ্বনি সংযুক্ত।



বাংলা শব্দ দিয়ে কখনো বাঙালী বা বাঙ্গালী শব্দ লেখা সম্ভব নয়।

ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন- "..অনুস্বারের ধ্বনি বাঙ্গালা ভাষায় "ঙ"-এর উচ্চারণের সহিত অভিন্ন হইয়া দাঁড়ানোর ফলে, "বাঙ্লা" শব্দকে "বাংলা" রূপে লেখা হয়। কিন্তু "বাঙাল-বাঙালী" এই শব্দ-দ্বয়ে অনুস্বার লেখা অসম্ভব।... এতদ্ভিন্ন, সংস্কৃতে অনুস্বারের যে উচ্চারণ ছিল... তাহার বিচার করিলে অনুস্বার-যুক্ত "বাংলা" শব্দের সংস্কৃত মতে উচ্চারণ দাঁড়ায় "বাআঁলা"; উত্তর-ভারতে এখন অনুস্বার-যুক্ত "বাংলা" উচ্চারিত হইবে "বান্ লা" রূপে, দক্ষিণ-ভারতে "বাম্ লা" রূপে। এই সমস্ত কারণে, "ঙ"-দিয়া "বাঙ্লা" লেখাই যুক্তিযুক্ত।"

ড. হুমায়ুন আজাদ, আহমদ শরীফসহ ঢাবির বাঙলা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস. এম. লুৎফর রহমান বাঙালী আদি শব্দের ব্যবহার ঠিক রেখে বাঙলা শব্দ লেখাকে ঙ দিয়ে লেখা শুদ্ধ বলেছেন।

ড. হুমায়ুন আজাদের বইয়ের প্রচ্ছদ-



আহমদ শরীফের বইয়ের প্রচ্ছদ-




প্রাচীন আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে আবুল ফজল লিখেছিলেন, বঙাল(بنغال) ভূখণ্ডের কখা। (بنغال) এ শব্দটি এসেছে বং(بنغ) বা (بانغ) থেকে। আর (ال) অর্থ বংশ। অর্থাৎ (بنغ+ال) বঙ এর বংশ।


ملك البنغال মুলুকে বাঙাল শব্দ ব্যবহার হয়েছে বাঙলা ভূখণ্ডে বুলবন সুলতানদের শাসনকালে(১২৮২-১৩৩৯ খৃ.)। মুলুক অর্থ রাজ্য, দেশ।

بلاد البنغال বিলাদ বাঙাল শব্দ ব্যবহার করেছেন ইলিয়াস শাহী সুলতানগণ(১৩৩৯-১৪১৪ খৃ.)। বিলাদ অর্থ দেশ। তবে এর বিশেষ অর্থ হচ্ছে স্বাধীন দেশ।



صوبه بنغال সুবে-বাঙলা শব্দটি মোগল শাসকরা ব্যবহার করেন। সুবাহ অর্থ- প্রদেশ।


এই বাঙলা ভূখন্ডের অধিবাসীদের সব সময়ই বঙাল বা বাঙাল বলা হত। এখনও বলা হয়।



এবার বঙ্গ শব্দটি নিয়ে আলোচনা করা যাক। এটি নদিয়া-শান্তিপুর অঞ্চলের সাথে সংশ্লিষ্ট। বঙ্গ শব্দটি বাঙালের সাথে যুক্ত হয়ে মুলুকে বাঙলা হয় সুলতানদের মাধ্যমে।

প্রাচীন বঙ্গ আর্য শাসকদের করতলগত হয়ে গৌড় হয়। ১৩৫১ সালে গৌড় এবং বঙাল মিলে হয় বাঙালা বা বাঙ্গালাহ। ১৯০৫ সালে এটা ভেঙ্গে দু'টুকরা করা হয়. একে বঙ্গভঙ্গ বলা হয়। ১৯১১ সালে আবার তা রদ হয়। ১৯৪৭ সালে আবার দুটুকরা হয়। আর ১৯৭১ সালে ৪৭ এর অংশ হয় স্বাধীন বাঙলা দেশ(বাংলা দেশ>বাংলাদেশ)।

বাংলার দু'টুকরার একটা পশ্চিম আর একটা পূর্ব। পশ্চিম বাংলা প্রাচীনকালে বঙ্গ, এরপর গৌড়, তারপর বাঙ্গালাহ বা বাঙালা, এরপর পশ্চিম বাংলা থেকে এখন আবার পশ্চিমবঙ্গ হয়েছে।

এই হচ্ছে ব্যাপার। বঙ্গ এবং বঙাল একদেশ একভাষা একজাতি হিসেবে ১৩৫১-১৯০৫ পর্যন্ত ছিল। এর আগে এটাকে একত্রিত হিসেবে পাওয়া যায় না আর এখন ত এটা আলাদাই চলছে।

সুতরাং বঙাল আর ঘটি(গৌড়ের অধিবাসী) নিয়ে আমাদের আরো গবেষণা হতে পারে।

ছবি- নেট থেকে