বুধবার, ১২ আগস্ট, ২০১৫

পাখি তুই ফিরে আয়



বাতাসে চামর দোলে
ফুলে দোলে মউ
শীত গেল গ্রীষ্ম গেল
আসে নাতো বউ
দূর দেশে মেঘ ভাসে
নদীত ভাসে নাও
আমারে ভাসাইলা কোন
দক্ষিণা বাও
নীড় কাঁদে হু হু হু
ডাহুক কাইন্দা যায়
আর কত পোড়াবি তুই
পাখি ফিরে আয়........

বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০১৩

একটি মৃত্যু একটি ইতিহাস




এক.
সদর রাস্তা দিয়ে গাড়ী যেন উড়ে চলছে। জানালা দিয়ে ধান খেতের বিস্তৃত সীমা ছাড়িয়ে দূরের সবুজাভ বৃক্ষমোড়ানো গ্রামের দিকে চেয়ে আছি। কিন্তু চোখ কিছুই দেখছে না। মনের পর্দায় তখন বাশবাড়ি গাও।

বড় চাচা আর নেই। একথাটা ভাবতে মন মানে না। ভিলেজ পলিটিক্স উপেক্ষা করে জাতপাত ভুলে চাড়াল-নমশুদ্র আপন করে নিয়েছিলেন এই শেখের বেটা আজিজুল হক পান্না মিয়া। তিনি কোনদিন বীর মুক্তিযোদ্ধা খেতাবও লাগাননি এবং কেউ তাকে মুক্তিযোদ্ধার সুবিধাও নিতে দেখেনি। অস্ত্র জমা দিয়ে চাষবাসে ফিরে গিয়েছিলেন তিনি।

দুই.
জানাজায় গ্রাম ভেঙ্গে পড়েছে। গ্রামের অধিকাংশ হিন্দু মহিলা-পুরুষ এসেছে শেষ দেখা দেখতে। অন্দরে হিন্দু মহিলাদের অনেকেই বিলাপ করে কাদছেন। তাদের সব মুসকিলের আসান পান্না দাদা অকুল পাথারে ভাসিয়ে চলে গেল!

জোহরের নামাজের পর জানাজা শেষে দাফন হল। সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ি ভর্তি মানুষ আসছে আর যাচ্ছে। মধুমতির পাড়ে বসে অন্ধকারের দিকে চেয়ে আছি। কখন যে পুথি প্রেমিক আওয়াল কাকা এসে পাশে বসেছেন জানিনা।

তিন.
আওয়াল কাকা টিএনটিতে ছোট পদে চাকুরি করতেন। শেষ বয়সে এখন আর চোখে তেমন দেখতে পান না। সুতরাং পুথি পাঠ তার শিকেয় উঠেছে বহু আগেই। অনেক সাধনা আর শ্রম দিয়ে বিশখানার মত পুথি জোগাড় করেছিলেন। ছোট বেলায় সন্ধ্যার পর কুপির আলোতে কত যে পুথিপাঠ শুনেছি তার মুখে। তিনি পুথিগুলোকে আমায় দিতে চাইলেন। সারা ঘর খুজে পাওয়া গেল মাত্র তিনখানা। বাকিগুলো বেহাত হওয়ার খবরও তিনি জানেন না।


চার.
তিনটি পুথি হচ্ছে-১. আদি ও আসল খয়বরের জঙ্গনামা। লেখক দোস্ত মোহাম্মদ। রচনাকাল- ১২৮৪ সাল(১৮৭৭ খ্রী.)। ২. আদি ও আসল খায়রল হাশর। লেখক সেখ কমরুদ্দীন। রচনাকাল-অজ্ঞাত, কারন প্রথম ও শেষ দিকের অনেকগুলো পাতা হারিয়ে গেছে। এবং ৩.আদি ও আসল ছহি বড় জৈগুণের পুথি, হানিফার লড়াই। লেখক সৈয়দ হামজা। এটি তিনি রচনা করেছেন ২৩ শে আশ্বিন ১২০৪ সাল (১৭৯৭ খ্রী.)। লেখা শেষ হয়েছে জুমার নামাজের কালে। মুদ্রাকর-মোহাম্মদ মুসা। মোহাম্মদী প্রিন্টিং প্রেস, ৪৯নং হরনাথ ঘোষ রোড, ঢাকা-১।

এই পুথিগুলো নিয়ে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে আছে।

--------------------------------------------------------------
ছবি- শেখের পো'র আর্কাইভ থেকে।

মঙ্গলবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

হে বঙাল তব ইজ্জতে মুই পরান সপি....পর্ব তিন





এক.
প্রথমবার যখন সেন্ট মার্টিন দেখতে যাই, একটা ঘোরের মত লেগেছিল। ছোটবেলায় ঘোলা পানির নদীতে সাতরে ঘন্টার পর ঘন্টা পার হয়ে যেত। আর এখানে অসম্ভব সবুজ পানি, সফেদ ফেনা দেখতে দেখতে দ্বীপে গিয়ে উঠলাম। চারদিকে নারকেলের বাগান। মনে হল গ্রামের বাড়িতে এসেছি। আমাদের বিরাট নারকেল বাগানের মত মফস্বল শহরটাও যেন একটা বড় নারকেল বাগান। শহরের উচু একটা ইমারতের ছাদে উঠে আমাদের শহরটা তেমনই লেগেছিল।

সেন্ট মার্টিনে পা দিয়ে তাই প্রথম তৃষ্ণা মেটাই ডাবের পানি দিয়ে। স্থানীয়দের কথা কিছুই বুঝি না। তবে এটুকু প্রথম বুঝলাম জাজিরার ডাবে চিনির শরবত পোরা। জাজিরা শব্দটাও সেখানে প্রথম শুনি। পরে একে নারকেল জিঞ্জিরা বা জাজিরা নামে জানতে পারি। বৃটিশরা এসে এ দ্বীপের নাম দেয় সেন্ট মার্টিন।

তারপর সুযোগ পেলেই নারকেল জিঞ্জারা গিয়েছি বারবার।

বহুদিন পর জাজিরাতুল আরব নিয়ে যখন একটা লেখা পড়ি। সাথে সাথে নারকেল জাজিরার ছবি ভেসে ওঠে পরাণ পটে।

আরবিতে জাজিরা جزيرة অর্থ- দ্বীপ। আর সেন্ট মার্টিনকে আরবিতে বলে নারকেল জাজিরা نارجيل جزيرة ।

বাংলাদেশে এমন আরো জাজিরা আছে। বুড়িগঙ্গার ওপার জিঞ্জিরা আসলে জাজিরা শব্দ থেকে হয়েছে।



শরিয়তপুরে আছে আরেক জাজিরা। পদ্মার পাড়ে এ জাজিরা উপজেলা এখন ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে।


দুই.
বৃহত্তর নোয়াখালীতে আছে অনেক চর। উড়ির চর, চর ফ্যাশন, চর মতলব। বরিশালে আছে কাউয়ার চর। খুলনার সুন্দরবনে দুবলার চর। এসব চরের প্রথম আগুন্তক হচ্ছে পাখি।



চর এলাকায় মনুষ্য বসতি গাড়ার পর ক্রমে তা মূল ভূখন্ডের সাথে একিভূত হয়। কিন্তু পেশিশক্তির প্রদর্শন চরেই বেশি দেখা যায়।

অভিধানে চর শব্দের দুটো অর্থ আছে।
এক. (বিশেষ্য) গুপ্তচর, গোয়েন্দা। রাজা বা রাজপুরুষ কর্তৃক প্রেরিত গোপনে সংবাদ সংগ্রহকারী ব্যক্তি। {সংস্কৃত ধাতু- চর+অ}
দুই.(বিশেষ্য) চড়া, নদীতে পলি জমে গঠিত ভূভাগ।
"চরে এসে বসলাম রে ভাই ভাসালে সে চর।-নজরুল ইসলাম" {তুলনা হিন্দী চর}

আরবিতে একটা শব্দ আছে জর جر । এর একটা অর্থ- অংশ, জেগে ওঠা মাটি। নদীর স্রোত ক্ষীণ হয়ে যে মাটি জেগে ওঠে।

চলবে-

ছবি- নেট থেকে।

আগের পর্ব- এক . দুই .
------------------------------------------------------------------

গাঁ, গাও, গেরাম(কথ্য), গ্রাম(সংস্কৃত) এ শব্দগুলোর একটাই অর্থ পল্লি জনপদ। প্রাচীন আরবিতে غاون গাওন শব্দের অর্থও জনপদ।
ساتغاون Satgaon وهو قسم من ساحل نهر هوغلي (6)Hooghly في البنغال
সাতগাও নামে বাঙলার হুগলী নদীর তীরবর্তী জনপদ।

গাওন থেকে গাও।

হে বঙাল তব ইজ্জতে মুই পরান সপি....পর্ব দুই



এক.
ছোট বইন জামাইয়ের অদ্ভুত এক শখ নারকেলের পুর দেয়া পুলি পিঠা পেট পুরে খাওয়া। কিন্তু বেচারা পিঠা খেয়ে সহ্য করতে পারে না। ঘন্টা পার হওয়ার আগেই লোটা নিয়া লৌড়া-লৌড়ি শুরু হয়ে যায়। তবু তার পিঠা খাওয়া চাই।

সুলতানপুর থেকে নারকেলপুর যেতে নদীপথ সবচেয়ে ভাল। যেতে যেতে নদীপাড়ে নারকেলবাগান দেখে পরান ভরে যায়।

বাংলাদেশে জেলা থেকে শুরু করে অনেক জায়গার নামে পুর শব্দটি আছে। এশব্দটি ভারতেও বেশ দেখা মেলে। ওড়িষার বিখ্যাত বন্দরনগরী হচ্ছে পুরী।


বাংলা ভাষায় পুর বা পুরী শব্দের আভিধানিক অর্থ বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধানের (২০১১) পৃ. ৭৬০ দেখা যায়-

১. পুর= (বিশেষ্য) আলয়, ভবন, গৃহ, নিকেতন(তোরা যাবি রাজার পুরে। -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।) নগর, গ্রাম, শহর ইত্যাদি(হস্তিনাপুর)। {সংস্কৃত ধাতু-পু+ক্বিপ}

আসমানিদের দেখতে যদি তোমরা সবে চাও
রহিমুদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।
-পল্লীকবি জসীম উদ্দীন

২. (বিশেষ্য) পিঠা ইত্যাদির ভিতরে পোরা হয় এমন বস্তু।(নারকেলের পুর) {সংস্কৃত-পুট}

বাংলাদেশের পুর সংশ্লিষ্ট স্থানগুলো প্রাচীন জনপদ এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে নদী তীরবর্তী বন্দর।


দুই.
ফেসবুকে আমার এক বন্ধুর নাম ইব্রাহীম বুরসাইদি। ইব্রাহীম তো বুঝলাম, কিন্তু বুরসাইদি আবার কি জিনিস? তিনি জানালেন, বুরসাইদে তার জন্ম।


অর্থাত পোর্ট সাইদের পাবলিক তিনি।

আরবি ভাষায় বুর بور শব্দের অর্থ- বন্দর। সেদিক দিয়ে ওড়িষার ঐ বন্দরনগরীর নাম বুরি।



আরবি ভাষার বাংলাদেশের ম্যাপ ঘাটলে দেখা যাবে সব পুরকে বুর লেখা হয়েছে।

চলবে-

ছবি- ইন্টারনেট
------------------------------------------------
আরবিতে জালবোত جالبوت নামে একটা শব্দ আছে। এর খাসা বাংলা হচ্ছে- মাছ ধরা নৌকা।

শুক্রবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৩

হে বঙাল তব ইজ্জতে মুই পরান সপি....পর্ব এক




দিবাচা
ব্লগার আবদুল হালিমপাভেল চৌধুরী বাংলা-বাঙালী বিষয়ে ভাবনা জাগানিয়া পোস্ট দিয়েছেন।

আমার শৈশবের বঙাল স্মৃতি এসব লেখায় দেখতে পাই। বড়চাচা কলকাতা যেতেন ফুটবল খেলতে। তাকে বঙাল বলে বরাবর সেখানে ডাকা হত। হীন অর্থ তাতে বলার ভঙ্গিতে থাকলেও, আমার চাচা বঙাল পরিচয়ে গর্ববোধ করতেন। আমরা বঙাল থেকে কখন বাঙালি হইছি তা তিনি গল্পচ্ছলে বলতেন। তার সেই গল্প এখন বই-কেতাব ঘেটে বাস্তব নজির হিসেবে বেশ পাওয়া যাচ্ছে।

'ক'অক্ষর গোমাংস কিম্বা মামদো ভুত বিষয় নিয়ে শেকড় খুঁজতে শুরু করার পর নিজকে বঙাল হিসেবে সৌভাগ্যবান মনে করি।

ভাষার মাস শুরু হচ্ছে। বঙাল, বাঙ্গালা, বাংলা শব্দের ব্যবহার কখন, কোথায় এর শুরু তা খুজে দেখার একটা তাগিদ দিলের ভেতর হু হু করে ওঠে।

আবদুল হাকিম বলেছিলেন-
যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।

আমাদের শেকড় এতকাল খুজেছি অপাত্রে-অজায়গায় খাতকাটা লেখায়। পুথি-কেতাবের যে অমূল্য ধন-ভান্ডার হেলায় সরিয়ে রেখেছি তা এখন ধুলো ঝেড়ে ঘেটে দেখা দরকার।

উৎকল-সিতারা(উড়িষ্যার নক্ষত্র) উপাধি প্রাপ্ত আঠার শতকের কবি হাজী আবদুল মজীদ বলেন-
এক.
তার দেশ বাঙ্গালাতে মোর ঘর উড়িষ্যাতে
বালেশ্বর কটক জেলায়।
বস্তা থানার পাশ কদিমি মোকাম বাস
গড় পদ্দা পরগণা বলায়।

দুই.
কেন কি দেহাতি আমি নিরেট গাঙার।
তাহাতে আমার পয়দা দেশ উড়িষ্যার।।
বাঙ্গালায় এসে আমি ইছলামী জবান।
পড়েশুনে লিখিলাম ওহে মেহেরবান।।

মুছলিম কর্তৃত্বের আগে পূর্ব ভারতে গৌড়-বঙ্গ বঙ্গাল নামে আলাদা আলাদা ভূখন্ড সেন, বর্মন বৌদ্ধ রাজগণ শাসন করেছেন। এসব অঞ্চল প্রথম একত্রে ১৩৫২ সালে বাঙ্গালাহ বা বাঙ্গালা নামে একদেশ হয়। এর আগে দেশনাম বাঙ্গালা ছিল না।

গৌড়-বঙ্গ আজ পশ্চিম বঙ্গ আর বঙাল হচ্ছে আজকের বাংলাদেশ। বাংলাদেশ নামটি প্রথম প্রকাশিত ডাকটিকেটে "বাংলা দেশ" লেখা হয়েছে।

হিন্দু-বৌদ্ধ আমলে পঞ্চ গৌড় নামে পরিচিত অঞ্চলগুলো শশাংক ও তারও আগে এটা দু'টো প্রধান ভাগে বিভক্ত ছিল। এক. বঙ্গ, দুই. বঙ্গাল। প্রাচীন শিলালিপি বা প্রত্ন ইতিহাসে এর আরো কিছু নাম ও অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। এধরণের নজির 'আরণ্যক' গ্রন্থাদি থেকে পাওয়া যায়।

১২০০ ইসাদিতে এ অঞ্চলে মুছলিম শাসন কায়েম হবার পর 'দিয়ারে লখনৌতি', 'দিয়ারে সাত গাঁও', ও 'দিয়ারে সোনার গাঁও' নামে রাজনৈতিকভাবে তিনটি মুছলিম অঞ্চল গঠিত হয়। ১৩৫২ ইসাদিতে ছোলতান হাজী শামছুদ্দিন ইলিয়াছ শাহ্ এই অঞ্চল তিনটিকে ঐক্যবদ্ধ করে "বাঙ্গালাহ" নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দেন।

তারও পরে সম্রাট আকবরের আমলে এর নাম হয় "সুবা বাঙ্গালাহ"।

চলবে-

ছবি- শেখের পো'র আর্কাইভ থেকে।
-------------------------------------------------------
দিবাচা অর্থ-উপক্রমণিকা, ভূমিকা, মূখবন্ধ ইত্যাদি।

দিয়ার শব্দটি আরবি দার এর বহুবচন। অর্থ- অঞ্চল, আবাসস্থল।

সাত গাঁও শব্দটির সাত আরবি সাথিউন থেকে এসেছে। অর্থ- উপকূলীয় অঞ্চল। গাঁও শব্দটি ফারসি/আরবি, অর্থ-জনপদ।

'ক' অক্ষর গোমাংস। বঙাল এবং বাঙালা লিপির প্রতি বিদ্বেষ ও হীন অর্থে এটা চালু করা হয়। ক অক্ষরটি বাঙলা লিপির, তাই এটা গোমাংসের তূল্য, অচ্ছূৎ। এলিপি শেখা হীন কাজ। সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখায় এর মর্মোদ্ধার আছে। যদিও এখন একে বলা হয়- অজ্ঞ, মূর্খ, জ্ঞানহীন। অর্থাৎ বঙালরা অজ্ঞ, মূর্খ, জ্ঞানহীন!!!!!

মামদো ভূত- বিশেষ্য/বিশেষণ, বাংলাদেশের লোকবিশ্বাস অনুযায়ী প্রেতযোনিপ্রাপ্ত মুসলমান, ইসলাম ধর্মাবলম্বী ভূত (মামদো ভূত)। আরবি মহম্মদ+ঈয়। দেখুন-বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান জানুয়ারি ২০১১ পৃ-৯৭৮

বঙাল অঞ্চলে যারা হিন্দু থেকে মুসলমান হত তাদেরকে গৌড়-বঙ্গের পন্ডিতরা বলত-ওর ঘাড়ে মামদো ভূত চেপেছে বলে কটুক্তি করত।

সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

অচেনা আকাশ...!!!




এই ছিল তোর মনে!
কতটা বিকেল কেটে গেছে
সুখাগ্ন আলাপে

বিষন্ন দুপুর ছিলনা কখনও
আমাদের আকাশে

দিন শেষে সন্ধ্যার তারারা
সলজ্জ্ব হত আমাদের
খুনসুটি দেখে

কি আবেশ ছিল
পরতে পরতে
হৃদয়ের ভাজ খোলা খামে

আজ একি হলো তোর
কলুষিত বিশ্বাসের ভোর
বিক্রি হয়ে গেলি রংচটা দামে


ছবি-নেট থেকে মারিং

সোমবার, ২৭ আগস্ট, ২০১২

প্রাচীন কুফি লিপি নিয়ে কথা...




লৌহজং এলাকায় এক মসজিদে স্থানীয় মাদ্রাসার বড় হুজুর এসেছেন। তিনি মেহরাবের উপরের লেখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। ইমাম সাহেব বললেন, কুফি লিপিতে কালিমা তৈয়্যবা।

হুজুর বিস্মিত হয়ে বললেন, এটা আবার কি জিনিস, এরকম লিপি ত কোন দিন দেখিনি। এটা ত পড়া যায় না, এমন জিনিস এখানে না দিয়ে বর্তমানের আরবি হরফে দিলে ঠিক হত।

ইমাম সাহেব আমাকে দেখিয়ে দিয়ে বললেন, এ বিষয়ে ইনি ভাল বলতে পারবেন।

হুজুর আমাকে দেখে আরো বিস্মিত। অবশেষে বলেই ফেললেন, এই প্যান্ট-সার্ট পরা ভদ্রলোক এসবের কি জানবে!

আমি বললাম, আসলে বিষয়টা আমারও এক সময় জানা ছিল না। ইসলামের প্রথমদিকে প্রায় সাড়ে তিনশত বছর কুরআন এই কুফি লিপিতে লেখা হত, সেটাও আমাদের অনেকের অজানা।

হুজুর এবার সন্দেহের চোখে তাকালেন, কিন্তু মুখে বললেন, আপনার কাছে কি দলীল আছে এ বিষয়ে।

আমার ব্যাগে মুসেআহ আল খত আল আরাবি(আরবি ক্যালিগ্রাফির বিশ্বকোষ) বইয়ের কুফি লিপির একটা কপি ছিল। সেটা তার হাতে দিলাম।



উনি বইটি উল্টে পাল্টে দেখলেন। ভেতরের এক জায়গায় আমাকে পড়তে বললেন। পড়ে শোনানোর পর তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং আবেগের সাথে বললেন, দীর্ঘ তিন যুগ আমি বুখারির দরস দেই এবং আমার ধারণা ছিল, ইসলাম ও তারিখ(ইসলামের ইতিহাস) সম্পর্কে আমি ভালই জানি। এখন মনে হচ্ছে, আসলে আমি কিছুই জানি না।

নেট ঘেটে কুফি লিপি নিয়ে অনেক কিছুই পাওয়া যায়।



৭ম শতকের কুফি লিপিতে লেখা কুরআনের একটি পাতা।

প্রতি দুবছর পরপর ইস্তাম্বুলে ওআইসির কালচারাল বিভাগ আইআরসিআইসিএ আন্তর্জাতিক ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। বাংলাদেশ থেকেও এ প্রতিযোগিতায় অনেকে অংশ গ্রহণ করেন। এ প্রতিযোগিতায় কুফি লিপি এবং মুসহাফ কুফি(কুরআনের কুফি) নামে বিভাগ আছে।



কুফি লিপি আরবি লিপির সবচেয়ে প্রাচীনতম লিপির অন্যতম। সুতরাং এর উন্নয়ন এবং বিচিত্র শাখার উদ্ভব বেশি হয়েছে। এখন এটা ইমারত বা স্থাপত্য লিপি হিসেবে বেশি ব্যবহার হয়।





মধ্যএশিয়ায় স্থাপত্যে বলা যায় মনোপলি ব্যবহার হয়েছে এলিপির।



কুফি লিপিতে কালিমা



কুফি লিপিতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম




১৪ শতকে ইলখানিদ শাসনামলে রুপার মুদ্রায় কুফি লিপিতে কালিমা।


আমাদের দেশেও বিশেষ করে মসজিদে এলিপির ব্যবহার বেড়েছে।



ঢাকার উত্তরার একটি মসজিদের মেহরাবের উপরে কুফি লিপিতে লেখা কালিমা।



কুফিলিপির হাতে-কলমে বইয়ের একটি পাতা। এখানে জিম হরফের নানান বিষয় দেখানো হয়েছে।



কুফি লিপির আরেকটি প্রাকটিক্যাল বইয়ের পাতা। এখানে ক্যালিগ্রাফি ও ইন্ডিভিজ্যুয়াল হরফ দেখা যাচ্ছে।

ছবি-নেট থেকে