বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০১৩

একটি মৃত্যু একটি ইতিহাস




এক.
সদর রাস্তা দিয়ে গাড়ী যেন উড়ে চলছে। জানালা দিয়ে ধান খেতের বিস্তৃত সীমা ছাড়িয়ে দূরের সবুজাভ বৃক্ষমোড়ানো গ্রামের দিকে চেয়ে আছি। কিন্তু চোখ কিছুই দেখছে না। মনের পর্দায় তখন বাশবাড়ি গাও।

বড় চাচা আর নেই। একথাটা ভাবতে মন মানে না। ভিলেজ পলিটিক্স উপেক্ষা করে জাতপাত ভুলে চাড়াল-নমশুদ্র আপন করে নিয়েছিলেন এই শেখের বেটা আজিজুল হক পান্না মিয়া। তিনি কোনদিন বীর মুক্তিযোদ্ধা খেতাবও লাগাননি এবং কেউ তাকে মুক্তিযোদ্ধার সুবিধাও নিতে দেখেনি। অস্ত্র জমা দিয়ে চাষবাসে ফিরে গিয়েছিলেন তিনি।

দুই.
জানাজায় গ্রাম ভেঙ্গে পড়েছে। গ্রামের অধিকাংশ হিন্দু মহিলা-পুরুষ এসেছে শেষ দেখা দেখতে। অন্দরে হিন্দু মহিলাদের অনেকেই বিলাপ করে কাদছেন। তাদের সব মুসকিলের আসান পান্না দাদা অকুল পাথারে ভাসিয়ে চলে গেল!

জোহরের নামাজের পর জানাজা শেষে দাফন হল। সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ি ভর্তি মানুষ আসছে আর যাচ্ছে। মধুমতির পাড়ে বসে অন্ধকারের দিকে চেয়ে আছি। কখন যে পুথি প্রেমিক আওয়াল কাকা এসে পাশে বসেছেন জানিনা।

তিন.
আওয়াল কাকা টিএনটিতে ছোট পদে চাকুরি করতেন। শেষ বয়সে এখন আর চোখে তেমন দেখতে পান না। সুতরাং পুথি পাঠ তার শিকেয় উঠেছে বহু আগেই। অনেক সাধনা আর শ্রম দিয়ে বিশখানার মত পুথি জোগাড় করেছিলেন। ছোট বেলায় সন্ধ্যার পর কুপির আলোতে কত যে পুথিপাঠ শুনেছি তার মুখে। তিনি পুথিগুলোকে আমায় দিতে চাইলেন। সারা ঘর খুজে পাওয়া গেল মাত্র তিনখানা। বাকিগুলো বেহাত হওয়ার খবরও তিনি জানেন না।


চার.
তিনটি পুথি হচ্ছে-১. আদি ও আসল খয়বরের জঙ্গনামা। লেখক দোস্ত মোহাম্মদ। রচনাকাল- ১২৮৪ সাল(১৮৭৭ খ্রী.)। ২. আদি ও আসল খায়রল হাশর। লেখক সেখ কমরুদ্দীন। রচনাকাল-অজ্ঞাত, কারন প্রথম ও শেষ দিকের অনেকগুলো পাতা হারিয়ে গেছে। এবং ৩.আদি ও আসল ছহি বড় জৈগুণের পুথি, হানিফার লড়াই। লেখক সৈয়দ হামজা। এটি তিনি রচনা করেছেন ২৩ শে আশ্বিন ১২০৪ সাল (১৭৯৭ খ্রী.)। লেখা শেষ হয়েছে জুমার নামাজের কালে। মুদ্রাকর-মোহাম্মদ মুসা। মোহাম্মদী প্রিন্টিং প্রেস, ৪৯নং হরনাথ ঘোষ রোড, ঢাকা-১।

এই পুথিগুলো নিয়ে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে আছে।

--------------------------------------------------------------
ছবি- শেখের পো'র আর্কাইভ থেকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন