তাকে আমরা কখনও ডাকি ফারমার, আবার কখনও ডাকি টাকাটাকি ইঞ্জিমেকার নামে। তার
বন্ধুরা তাকে চিকু আলি ওরফে মিচকা হাসি নামে ডাকতে পছন্দ করে। আর সে নিজকে
পরিচয় দেয় শেখ চিকন আলি শেখু। শেখু তার দাদার দেয়া উপাধী।
সারাদিন নানান রকম গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিজকে ব্যস্ত রাখে চিকু শেখ। স্কুলের পড়ার বাইরে মাছ-মুরগি চাষ, বাগান করা,
'এসো নিজে করি' নামের ছোটদের বিজ্ঞান সিরিজের বইগুলোর প্রতি তার আগ্রহ
বেশি। গ্রাম থেকে দাদা-নানা আসলে চাষবাস নিয়ে রীতিমত পেশাদারি আলাপ চালায়
সে। আমরা তাতে বেশ মজা পাই।
বাসায় কোন খেলনা আস্ত নেই। সব তার মহান গবেষণায় প্রাণ বিসর্জন দিছে।
এমনকি পুরান মোবাইল, টুইনওয়ানও তার সার্জারির হাত থেকে রেহাই পায় নাই।
তবে কম্পু-লেপটপের ওপর উল্টাপাল্টা হাত বুলানোর জন্য হালকা পিঠপালিশও তার
ভাগ্যে জুটেছে।
আমার পড়ার ঘরে স্টিলের আলমিরার ওপর সে গবেষণাগার বানাইছে। বারান্দায় বসে
ঠুকঠাক করে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নিয়ে। ওটা হল তার ফিল্ডওয়ার্কের জায়গা।
নিজের বানানো ফ্লাশ লাইটের আলো বাড়ানো-কমানো, ব্যাটারি চালিত হাতপাখা,
পোকা-মাকড় বড় করে দেখার জন্য বাল্বের ভেতর পানি ভরে তা দিয়ে অনুবিক্ষণ
যন্ত্র বানানোসহ হরেক পদের গবেষণা করে সে।
একবার সে স্কুল থেকে ফেরার পথে ইমারত তৈরির মসল্লা মিকচার যন্ত্র দেখে এসে
খাতায় সেটা নিজের মত করে আঁকলো। এরপর ছবিতে বিভিন্ন অংশের বর্ণনাও লিখে
দিল। মিকচারটা ছয়তলার ছাদে কিভাবে যাবে সেটার একটা ডায়াগ্রাম একে ফেলল।
পরে এ মহান গবেষণাকর্ম তার মা পুরোন কাগজপত্রের সাথে ফেরিওয়ালাকে দিয়ে
দেয়ায় প্রতিবাদ স্বরূপ এক সপ্তাহ ডাল খাওয়া বন্ধ রাখে সে। কারণ ডাল
হচ্ছে তার প্রিয় মেনুর একটা। এবং সেটা অবশ্যই পাতলা হতে হবে। আমাদের খাবার
টেবিলে ডাল-স্যুপ-পায়েশ কম্পোলচারি আইটেম।
চিকু শেখের আরেকটা বাতিক হলো প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীর ছবি আঁকা। সেটা সে
নিজস্ব স্টাইলে করে থাকে। গরু-বাঘ-মুরগী লাখ বছর আগে কেমন ছিল সেটা আঁকা আর
কি। তার মা এসব জন্তুর ছবি আঁকার ঘোর বিরোধী, তাই লুকিয়ে এগুলো সে মাঝে
মধ্যে আঁকে এবং আমাকে দেখায়। আমি সমালোচনা করে যখন বলি বাঘের চাইতে দাঁতটা
বেশি বড় হইছে। তখন বিজ্ঞের মত করে বলে, এই জন্য ত বর্তমানের বাঘের দাঁত
এত ছোট হইছে।
ছোটবেলায় একবার নানাবাড়ীর গরু তাকে গুতা দিয়েছিল। বেদ্দপ গরুরে শিক্ষা
দেয়ায় জন্য সে একটা প্রতিবাদি কার্টুন গরু আঁকল। সে ছবিতে গরুর শিং অনেক
বড় আর মোটা আঁকলো। এতবড় শিং নিয়ে গরুর দাড়িয়ে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে
বুঝানোর জন্য চোখ দিয়ে পানি পড়া দেখাল। তবে সব চেয়ে ইন্টারেস্টিং ছিল,
গরু যাতে পেশাব করতে না পারে সেজন্য পেশাব দড়ি দিয়ে বেধে দেয়া আঁকল।
এখন এতসব কাজের ভেতর বাগান করা এবং তা নিয়ে নানান রকমের বই পড়া, নেট ঘেটে তথ্য দেখা আর তা কাজে লাগানোর ব্যাপার দেখা যাচ্ছে।
জানালার এ জায়গাটুকুতে সে বাগান করেছে। নিম, লিচু, কচু, নয়নতারা, পিয়াজ,
মরিচ এবং কয়েক রকমের ঘাস আছে এখানে। গাছের একটা তালিকা করেছিল সে।
সকাল-সন্ধ্যা পানি দেয়। কখনও টবে চা-পাতা দেয়।
বাগান করাটা এখন তার অন্যতম প্রধান কাজে পরিণত হয়েছে। আমরা তার এসব কাজে বাধা দেই না।
চিকু শেখ ভবিষ্যতে কি হতে চায়, তা জানার জন্য হয়ত আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে।