শনিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১২

মধুমতি, তোর টানে...


সরষের তেলে চিংড়ি বড়ার স্বাদ
কখনো বাতাসে ভাসে পাটের সোঁদা গন্ধ
মধুমতি, তোর টানে এসেছিরে ফিরে
দুহাত ভরা দেখ, কত আনন্দ

দূরে হাওয়ায় কাঁপে ঘুঘু ক্রন্দন
সাথী আয় ফিরে আয়
আমি যাই, উড়ে যায়
মন যায় তারও আগে
পরি যে আমার ভরা নিশি জাগে

বেলা পার হয় ছায়াবিথিতে ধীরে
অলস সন্ধ্যা নামে
আমায় দেখে সে হঠাৎ দরোজায়
দুচোখে বর্ষা নামে

শুক্রবার, ২৪ আগস্ট, ২০১২

চিকু আলির বাগানবিলাস..




তাকে আমরা কখনও ডাকি ফারমার, আবার কখনও ডাকি টাকাটাকি ইঞ্জিমেকার নামে। তার বন্ধুরা তাকে চিকু আলি ওরফে মিচকা হাসি নামে ডাকতে পছন্দ করে। আর সে নিজকে পরিচয় দেয় শেখ চিকন আলি শেখু। শেখু তার দাদার দেয়া উপাধী।

সারাদিন নানান রকম গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিজকে ব্যস্ত রাখে চিকু শেখ। স্কুলের পড়ার বাইরে মাছ-মুরগি চাষ, বাগান করা,
'এসো নিজে করি' নামের ছোটদের বিজ্ঞান সিরিজের বইগুলোর প্রতি তার আগ্রহ বেশি। গ্রাম থেকে দাদা-নানা আসলে চাষবাস নিয়ে রীতিমত পেশাদারি আলাপ চালায় সে। আমরা তাতে বেশ মজা পাই।

বাসায় কোন খেলনা আস্ত নেই। সব তার মহান গবেষণায় প্রাণ বিসর্জন দিছে। এমনকি পুরান মোবাইল, টুইনওয়ানও তার সার্জারির হাত থেকে রেহাই পায় নাই। তবে কম্পু-লেপটপের ওপর উল্টাপাল্টা হাত বুলানোর জন্য হালকা পিঠপালিশও তার ভাগ্যে জুটেছে।



আমার পড়ার ঘরে স্টিলের আলমিরার ওপর সে গবেষণাগার বানাইছে। বারান্দায় বসে ঠুকঠাক করে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নিয়ে। ওটা হল তার ফিল্ডওয়ার্কের জায়গা। নিজের বানানো ফ্লাশ লাইটের আলো বাড়ানো-কমানো, ব্যাটারি চালিত হাতপাখা, পোকা-মাকড় বড় করে দেখার জন্য বাল্বের ভেতর পানি ভরে তা দিয়ে অনুবিক্ষণ যন্ত্র বানানোসহ হরেক পদের গবেষণা করে সে।

একবার সে স্কুল থেকে ফেরার পথে ইমারত তৈরির মসল্লা মিকচার যন্ত্র দেখে এসে খাতায় সেটা নিজের মত করে আঁকলো। এরপর ছবিতে বিভিন্ন অংশের বর্ণনাও লিখে দিল। মিকচারটা ছয়তলার ছাদে কিভাবে যাবে সেটার একটা ডায়াগ্রাম একে ফেলল। পরে এ মহান গবেষণাকর্ম তার মা পুরোন কাগজপত্রের সাথে ফেরিওয়ালাকে দিয়ে দেয়ায় প্রতিবাদ স্বরূপ এক সপ্তাহ ডাল খাওয়া বন্ধ রাখে সে। কারণ ডাল হচ্ছে তার প্রিয় মেনুর একটা। এবং সেটা অবশ্যই পাতলা হতে হবে। আমাদের খাবার টেবিলে ডাল-স্যুপ-পায়েশ কম্পোলচারি আইটেম।

চিকু শেখের আরেকটা বাতিক হলো প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীর ছবি আঁকা। সেটা সে নিজস্ব স্টাইলে করে থাকে। গরু-বাঘ-মুরগী লাখ বছর আগে কেমন ছিল সেটা আঁকা আর কি। তার মা এসব জন্তুর ছবি আঁকার ঘোর বিরোধী, তাই লুকিয়ে এগুলো সে মাঝে মধ্যে আঁকে এবং আমাকে দেখায়। আমি সমালোচনা করে যখন বলি বাঘের চাইতে দাঁতটা বেশি বড় হইছে। তখন বিজ্ঞের মত করে বলে, এই জন্য ত বর্তমানের বাঘের দাঁত এত ছোট হইছে।

ছোটবেলায় একবার নানাবাড়ীর গরু তাকে গুতা দিয়েছিল। বেদ্দপ গরুরে শিক্ষা দেয়ায় জন্য সে একটা প্রতিবাদি কার্টুন গরু আঁকল। সে ছবিতে গরুর শিং অনেক বড় আর মোটা আঁকলো। এতবড় শিং নিয়ে গরুর দাড়িয়ে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝানোর জন্য চোখ দিয়ে পানি পড়া দেখাল। তবে সব চেয়ে ইন্টারেস্টিং ছিল, গরু যাতে পেশাব করতে না পারে সেজন্য পেশাব দড়ি দিয়ে বেধে দেয়া আঁকল।



এখন এতসব কাজের ভেতর বাগান করা এবং তা নিয়ে নানান রকমের বই পড়া, নেট ঘেটে তথ্য দেখা আর তা কাজে লাগানোর ব্যাপার দেখা যাচ্ছে।

জানালার এ জায়গাটুকুতে সে বাগান করেছে। নিম, লিচু, কচু, নয়নতারা, পিয়াজ, মরিচ এবং কয়েক রকমের ঘাস আছে এখানে। গাছের একটা তালিকা করেছিল সে। সকাল-সন্ধ্যা পানি দেয়। কখনও টবে চা-পাতা দেয়।



বাগান করাটা এখন তার অন্যতম প্রধান কাজে পরিণত হয়েছে। আমরা তার এসব কাজে বাধা দেই না।

চিকু শেখ ভবিষ্যতে কি হতে চায়, তা জানার জন্য হয়ত আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে।

বৃহস্পতিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১২

টুংগীপাড়ার পথে......





সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।

এবার হঠাৎ বর্ষণমুখর দিনে জন্মভূমির উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লাম। যাত্রাবাড়ীর যানজট ছাড়া এবারের ভ্রমণটা ছিল এককথায় মন জুড়ানো। পুরো রাস্তা মখমলের মত মসৃণ আর আরামদায়ক। সাথে ক্যামেরা ছিল, কিন্তু তাড়াহুড়োয় পর্যাপ্ত ব্যাটারি না থাকায় অনেক ছবি তোলা যায় নাই।



মাওয়া লঞ্চঘাট থেকে পদ্মায় ভেসেছি আমরা।



ঘাটের পাশেই ইটের ভাটা। নদীতে গরুর গা ধুইয়ে দেয়া আর নিজেরাও ডুব দেয়ার কাজ সারছে মাওয়া পাড়ের লোকেরা।



একটা ফেরিকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাই।



একটা লঞ্চও পেছনে পড়ে গেল।



অবশেষে কাওরাকান্দি ঘাটে পৌঁছে গেলাম।



পরিবহণটার সিটগুলো ছিল বেশ আরামদায়ক, আর একটু বৃষ্টিও নেমেছে, এজন্য কোন ফাকে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ নরম হাতের ধাক্কা।

-এই দেখো, গাড়ি জয়বাংলা পাম্পে থেমেছে। আমার একটু ইয়ে চেপেছে।

কি আর করা! আরামের ঘুমের বারটা বাজিয়ে টয়লেটের খোজে নামলাম তাকে সাথে নিয়ে। নগরকান্দার এ তেলের পাম্পটি সবাই জয়বাংলা পাম্প নামে চেনে, যদিও অন্য কি একটা নাম আছে।



হরিদাসপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র। সেতুর ওপর থেকে তোলা। গোপালগঞ্জ শহর এখান থেকে প্রায় দশ মিনিটের পথ।



ঘোনারপাড়ার কাছে চলে এসেছি। সোজা গেলে মোল্লাহাট সেতু দিয়ে খুলনা-বাগেরহাট-মংলা। ডানে গোপালগঞ্জ শহর। আমরা বামে যাবো।



টুংগীপাড়া হাইস্কুল। এখানে আসলে আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। অনেক মান-অভিমান আর স্মৃতি জড়িয়ে আছে।



এই সেই ঐতিহাসিক টুংগীপাড়া মোড়। হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা আর ভালবাসার মানুষটি ঘুমিয়ে আছে এখান থেকে সামান্য একটু দুরে। আপনাদের সবাইকে দাওয়াত এখানে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য।

[ব্যাটারি ডাউন হওয়ায় শেষ ছবিটা ভাল ওঠে নাই]

হায় সুরুয়া..





একদিন সুরুয়া খেয়েছিলাম..
আসলে কথাটা হবে
খাইয়ে দিয়েছিলে...

তখন কেবল আমার
বসন্তের ফুল ফুটতে শুরু করেছিল
সেদিন জ্বরের ঘোরে কী বলেছি জানিনা
তারপর কতদিন পরি পরি বলে খেপাতে তুমি
কেউ জানত না পরিটা আসলে কে

এখনও পরি আছে
কেননা তুমি আছো
এখনও সুরুয়া খাওয়া হয় খুব

কেবল পরিকে দেখিনা
কুড়িটি বসন্ত



ছবি-নেট থেকে

অদ্ভুত সুন্দরের খোঁজে




সুন্দরকে উপলব্ধির অর্থ হলো
ভালবাসাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটু দেখে নেয়া
যেভাবে কোনো শিল্পকর্ম বারবার ছুঁয়ে দেখলেও
পিয়াস থেকে যায়।

কখনো নিঃসঙ্গ দুপুরে দিঘীর জলে
শুকনো পাতার নিমজ্জন
কখনো বিকেলের নরম রোদে
ভালোলাগার অনবরত সংসক্তি।

আসন্ধ্যা কোন অদৃশ্য ইচ্ছায়
বুভুক্ষ থাকা
ফলাহার রসনাবিলাস আর
দেহসুখ সরিয়ে রাখা

কী সেই সুন্দরের তিয়াস
যে সৌন্দর্য হৃদয়ের কাছে হার মানে না?
দেহের সব ইচ্ছার কাছে পরাভূত নয়?

মূলত বৃষ্টির অঝোর ধারায়
ধুয়ে যায় যে পঙ্কিলতা
অদ্ভুত সুন্দরের খোঁজে
এ কৃচ্ছসাধনা।


ছবি- নেট থেকে

জানি সে আছে




আমি জানি আছে
তার নম্বরটাও আছে সেভ করা
সে আছে তার চারপাশ আলো করে
শুধু একা হলে হাহাকার ওঠে
অন্ধকার চিরে

এইতো সেদিন মুঠোফোনে
উচ্ছল কলরোল, বাধভাঙ্গা আশা
স্বপ্নপাখির ডানায় শুধু
সবুজের আশা

কৈশোর ঝলমল মুখখানা ভাসে
আহা! এই মন তোরে দেখি
ভেদবুদ্ধি গেল নাশে

এখনও খুব ভোরে হঠাৎ জেগে
হু হু করে মন
ভাবি বসে ঝিম মেরে
এই বুঝি বেজে ওঠে ফোন

জানি নিজেকে বেধেছে সে
নিঠুর মায়ায়
চারপাশ হৈচৈ ছুটে চলা পথ
ভয় শুধু কখন
একলা পহর আসে
মেঘলা ছায়ায়
আমি জানি সে আছে

সেও জানে আমি আছি
খুবই কাছাকাছি

বিভ্রান্ত করে কি লাভ!!!



জ্ঞান নিয়ে অজ্ঞানী কারবার।

আমরা মনে করি, একটা বিষয়ে কোন উদ্দেশ্যে এই জ্ঞান জিনিসটাকে যদি উল্টে-পাল্টে দিতে পারি, তাহলে আম পাবলিকরে একটা অজ্ঞানী ঘুটা খাওয়ানো যাবে।

কিছু লোকরে হয়ত করা যায়। কিন্তু সবাইকে নয়। কেউ বিষয়টা সাথে সাথে ধরে ফেলেন এবং দাত কেলানো হাসি দেন।

কুরআন-হাদিসের কথাগুলো আরবিতে এসেছে আমাদের কাছে। আমরা অধিকাংশ এই ভাষাটা জানিনা বলে কিছু জ্ঞানপাপী আমাদের বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করেন।

এই ব্লগে এমন কিছু কারবার আছে। কেউ আবার নবী হয়ে প্রেরণাবাণী নাযিল করেন। আমরা কেউ কেউ শুধু দাত কেলাই।

বিনোদন একটি ভাল জিনিস। কিন্তু অতিরিক্ত হলে তাতে বদহজম হয়।

এক ব্লগার আরেক ব্লগারকে ভন্ড বলে যে পোস্ট দিয়েছেন তাতে বদহজমের সমূহ আশঙ্কা আছে।

উস্তাদের কাছে ইলম অর্জনের জন্য গিয়েছি, তিনি একটি ফার্সি কবিতা দিয়ে শুরু করলেন।


ইলমে রা হারগেজ না ইয়াবি তা না গীরে সসখেসাল
হেরসে কোতা ফাহমে কামেল জময়ে খাতের কুল্লি হাল
খেদমতে ওস্তাদে বায়াদ হাম সবক খানি মোদাম
লফজে রা তাহকিকে কুনি তা সুয়ে মরদে কামাল।




ইলম অর্জনের জন্য ছয়টি গুন ধারণ করতে হয়।
এক. প্রচন্ড আগ্রহ
দুই. পরিপূর্ণ অনুধাবন
তিন. সবার সাথে সদ্বভাব বজায় রাখা
চার. ওস্তাদের খেদমত করা
পাঁচ. পাঠ তৈরি রাখা
ছয়. প্রতিটি শব্দের বিশ্লেষন করা

তিনি সতর্ক করে দিয়ে বললেন,

বেআদব, অহঙ্কারী, গোঁয়ার বা একগুয়ে লোকেরা ইলম বা জ্ঞান দিয়ে কারো উপকার করতে পারে না, নিজেও উপকৃত হয় না।

রমজান মাস। সংযমের মাস।
রোজা রেখে এই কথাগুলো না বললেও হত। তবু বলতে হল বলে দুঃখিত।

সবাইকে রমজানের শুভেচ্ছা


ছবি-নেট থেকে