বৃহস্পতিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১২

আত্মশুদ্ধির সময় এলো আবার



গত দু'তিন দিন ধরে নিজকে রোজাদার মনে হচ্ছে। মাগরিবের আজান শুনে ইফতারির কথা মনে ভেসে ওঠে। শেষরাতে আজান শুনে ধড়মড়িয়ে উঠি। সেহরি খাওয়া হলোনা!

আসলে রমজান শুরুর আগে প্রতি বছরই এমন অনুভূতি শরীর-মনে জড়িয়ে ধরে। বিশ্বাসের এই দোলা দিয়ে যাওয়াকে কিভাবে ব্যক্ত করা যায়।

রোজার প্রস্তুতিও নিজের অজান্তে এগিয়ে চলে। পুরনো বই-কেতাব আর নেট ঘেটে মছলা-মাছায়েল পড়ি।

কুরআন পাঠ চলে। রোজার আয়াতগুলো বারবার পড়ি। মনে একধরণের শান্তির পরশ লাগে।


রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা’আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।
সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫

আজ জুমার দিন মহল্লার মসজিদে মুসল্লির সমাবেশটা উপচে পড়ার মত। আমার কাছে এটা একটা উৎসব উৎসব মনে হয়। অন্য জুমায় নিয়মিতদের দেখেছি। আজ শিশু-যুবক-প্রবীনদের জোয়ার সেখানে। যুবকদের সংখ্যা গতবারের তুলনায় বেশি মনে হল। হাজারের বেশী মুসল্লি রাস্তায় জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়ল। ইয়াংদের কয়েকজন নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে, রোজা আইছে, আকাম-কুকামডা অফ রাখতে হইব। রোজায় ভাল কামের লগে যেন ভেজাল না মেশানো হয়।

এমন সব সরস মন্তব্য।

আমার কাছে কুরআনের সুরা বাকারার ১৮৩ আয়াতটা পড়ে নিজেকে শুদ্ধ করার অনুপ্রেরণা পাই বারবার।

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।


আজ প্রথম তারাবি পড়ার পর খুব ভাল লাগছে।

ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। সবাই সেহরি খেতে বসেছে। আমাকে ডাকা হয়নি। আমি হঠাৎ জেগে উঠেছি। ডাকা হয়নি বলে মুখভার করে সেহরি খেতে গিয়েছি। মা বলেন, খোকা তুমি এখনও অনেক ছোট। রোজা রাখার সময় হয়নি তোমার। আমি গাল ফুলিয়ে বলেছি পাশের বাড়ির আবির-শায়লারা কি আমার থেকে বড়! মা হেসে দিয়েছেন। বাবা পিঠে-মাথায় হাত বুলিয়ে বলতেন, খোকা, রোজা শুধু না খেয়ে থাকা নয়। গরীব-দুখীর কষ্ট অনুভব আর মন্দ থেকে দূরে থাকার ট্রেনিংও বটে।

আহা! সেসব কথা রোজা এলে এখনও খুব মনে পড়ে। শুধু সেই হাসিমুখ আর স্নেহের হাত নেই পাশে।

সবাইকে রমজানের শুভেচ্ছা।



ছবি- নেট থেকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন