শনিবার, ২৪ মার্চ, ২০১২

পাতলা কাহিনী.......!!!!




বাড়ীতে গিয়েছি অনেকদিন পর। সমবয়সীদের সাথে বিকেলে পুলের ওপর বসে আড্ডা মারছি। নানান বিষয়ে রকমারি প্যাচাল আর চাপাবাজি চলছে।

আমাদের ছিকু ভাই হাফেজ। নাম আসলে অছিকুর রহমান। আমরা ডাকি ছিকু ভাই। তো, ছিকু ভাই খুলনা শহরে থাকে, সপ্তাহন্তে গ্রামে আসে, পুলের ওপর শুক্কুরবার বিকেলে আড্ডা মারতে না পারলে তার নাকি পরবর্তি সপ্তাহ ব্যাপি পেটের মধ্যে বাটবুট করে এবং দাওয়াতের (মরা বাড়ীসহ দোকান ওপেনের মিলাদ পর্যন্ত) খাবার হজম হয়না। তাই কষ্ট করে হলেও সাইকেল দাবড়িয়ে বাপের ভিটেয় আসতে হয়।

আসলে ঘরে একখান নয়া জিনিস আইছে, সেটা অন্যরা জানলেও আমার জানা ছিলনা। তাই তার এই বয়ানে আমার কিঞ্চিৎ সন্দু থাকলেও অন্যরা দেখি দাত ক্যালাইতেছে।

বুঝলাম, ডাইলের অম্বলে দুই একখান নকরোচ লেদি আছে!! তো, ছিকু ভাইয়ের দাওয়াতের হালচাল জিগাইলাম।

পরথমে এড়াইয়া গেল। কিন্তু আমাদের কালা কুদ্দুসের বিষয়টা নজর এড়াল না। সে চাইপা ধরল- আইচ্ছা ছিকু। গত সপ্তায় শুনলাম তোর নাকি হেব্বি ঝোলা নামছিল(লুজ মোশন আর কি)? কাইনি কি? কইয়ালাও। নাকি সুন্দর মেশিনে ডিউটি বেশি পড়ছে? তার কথায় আমরা তখন হা হা প গে।

এইবার বুঝলাম ছিকুর সপ্তাহ মারার কাহিনী। যাইহোক, ছিকু তার পাতলা ঘটনার বয়ান দিল।

ছিকু যে মসজিদের হাফেজি মক্তবে ছেলে-পিলে পড়ায়, সে মহল্লায় একটা কলোনি আছে। কলোনির এক লোক দাওয়াত দিয়ে গেছে, তিন-চারজন তালবিলিম নিয়ে দুপুরে চারট্টা ডাল-ভাত খাবেন। যথা সময়ে ছিকু তার সাগরিদসহ উপস্থিত।

-এটা কি সঞ্জু সাবের বাসা?
-জে, আপনারা কি বাবদে?
-সঞ্জু সাবে আমাদের দুপুরের দাওয়াত করছেন।
-আসেন, বসেন। উনি তো সন্ধ্যায় ফিরবেন বলে ভোরে বাইরে গেছেন। আর আপনাদের কথাও কিছু বলেন নাই!
- ও..তাইলে আমরা আসি।
-না না! আপনারা যাবেন না। উনি বলেন নাই আমাকে, তাতে কি হইছে। আপনারা বসেন। অল্প সময়ের মধ্যে খাবার তৈয়ার হয়ে যাবে। (পর্দার আড়াল থেকে ঘরের মহিলার এমন অনুনয় শুনে ছিকু সাগরেদদের নিয়ে বসে পড়ে এবং কুরান পড়া শুরু করে।)

কিছুক্ষণের মধ্যে খাবার এসে পড়ে। ছিকু মুনাজাত শেষ করে সাগরেদদের নিয়ে খেতে বসে।

ভাজি-চচ্চড়ি, মুরগি, পাঁচ ফোড়ন দেয়া ডাল, লুচি আর লাল চালের চিকন ভাত বেশ উপাদেয় লাগে। ঘরে সাত-আট বছরের এক ছেলে খাবার আনছে ভেতর থেকে। এর মধ্যে ছোট্ট পেতলের একটা বাটিতে ভুনা মাংস আনা হলো। ছিকু ভাবল, এটা তার জন্য স্পেশাল। খেতে বেশ মজা, তবে একটু পোড়াভাব আর টকটক গন্ধ। যাইহোক, খাবার শেষে বিদায়ের পালা। পাত্রগুলো ভেতরে নেয়া হচ্ছে।

হঠাত মহিলা তার বাচ্চাকে নিচু স্বরে বলছে, বাবু! এই বাটির মাংস ত তোমাকে নিতে কই নাই!
-ক্যান মা? তারা কি এ মাংস খান না!
-না অনারা!.. আচ্ছা বাবা চুপ করো কিছু কইও না। আমারই ভুল হইছে।

ছিকু আর তার ছাত্ররা মক্তবে এসে দেখে সেই লোক বসে আছে। তাকে দেখে সে ক্ষুব্ধ কন্ঠে কইল।
-কখন থেকে আপনার জন্য বসে আছি।
-আমরা তো আপনার বাসা থেকে খেয়ে এসেছি। আপনার ছেলে পলু আমাদের খাবার এনে খাওয়াল আর আপনি নাকি বিকেলের আগে বাসায় ফিরবেন না!
-কি সব বলছেন? আমার ত কোন ছেলেই নেই! আচ্ছা, আপনারা কি হলুদ বিল্ডিংয়ের নিচতলার বাসায় গেছিলেন?
-হ্যা, কেন ওটা আপনার বাসা না?
-না না! ওটা তো সঞ্জু বাবুর বাসা। কেন বউদি আপনাদের বলেনি!
-ওহো! ভুল বাসায় দাওয়াত!

-যাকগে এসব। চলেন, দেরি হয়ে গেল।
-না মানে! আমার ছাত্রদের নিয়ে যান।

কয়েকজন ছাত্র নিয়ে সঞ্জু মিয়া চলে যায়। আর এদিকে ছিকুর কেবলই মনে হতে থাকে, পেতলের বাটিতে কিসের মাংস ছিল!!!

এরপরই অনিবার্য ফলাফল...পাতলা কাহিনী।

ছবি-নেট থেকে মারিং

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন