বুধবার, ১১ এপ্রিল, ২০১২

ক্যালিগ্রাফির ক্লাস...........পর্ব দুই





আমরা ক্যালিগ্রাফির বিষয় জানতে গিয়ে দেখি হরফ বা অক্ষরকে শিল্প এবং একটা নীতিমালার সংমিশ্রনে গড়ে তোলা হয়েছে। আরবি কিংবা বাঙলা যে ভাষাই হোক না কেন, হরফের কাঠামোকে শিল্প সম্মত করে প্রকাশের প্রচেষ্টা করেছেন শিল্পীরা।

বাঙলা হরফের বিষয়ে বর্তমান কম্পিউটারে যে সুতন্বি ফন্ট দেখছি, তার নাম ছিল তন্বি। '৮০ দশকে প্রথমে বাংলাদেশে কিভাবে মোস্তফা জব্বার এটা করলেন, সে বিষয়টা নিয়ে একটু বলি। মোস্তফা জব্বার নিজে আর্টিস্ট নন এবং হাতে-কলমে এটা করার সুযোগ তার ছিল না। বাঙলা হরফ তৈরির জন্য তিনি শিল্পী হামিদুল ইসলামকে(চারুকলার শিল্পী হামিদ ভাই না) সাথে নিয়ে কাজ শুরু করেন। হামিদুল ইসলামের বাঙলা হাতের লেখা চমৎকার এবং বাঙলা হরফ নিয়ে তিনি কাজ করেন।

যখন এটা করা হয়েছিল তখন ইনপুট ব্যবস্থা এখনকার মত ভাল ছিল না। হামিদুল ইসলাম বাঙলা হরফের লেআউট করে দিতেন। সেটা দেখে স্ক্রিনে অনুমান করে পাথ (ফটোশপে পেন টুল দিয়ে রেখার মাধ্যমে অক্ষরের আউটলাইন দেয়া) করে প্রিন্ট করে আবার সেটা ঠিক করা হত। এতে হরফের আকৃতি শিল্পীর মনমত এবং শিল্পসম্মত করা খুবই কঠিন ছিল। একপর্যায়ে হতাশ হয়ে এটা করা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর হামিদুল একটি উপায় বের করেন। মজার বিষয় হচ্ছে ইনপুট জিনিসটা কি, মোস্তফা জব্বার সেটা তখন জানতেন না। আর স্ক্যান করার যন্ত্রও তাদের ছিল না।

উপায়টি হল- হামিদুল একটি সেলোফেন পেপারে মনিটরের মাপ মত হরফ লিখতেন। এরপর সেটা মনিটরের ওপর কসটেপ দিয়ে সেটে দিয়ে পাথ করা হত। এতে হরফের আকৃতিতে যথার্থ রূপটি এসে যায়। এভাবে তন্বি ফন্ট হয়।

হামিদুল এটার আদর্শ হিসেবে রোমান হরফের (রেগুলার) মাপকে গ্রহণ করেন। হরফের ভেতর মাপ ও চোখে ভাল লাগার জন্য বিভিন্ন কারিগরি বিষয় আছে, যেটা বেশ জটিল। বর্তমানে হরফকে একটি নীতিমালার ভেতর ফেলে গঠন করা হয়।



কিন্তু বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফিক বাঙলা অক্ষর এখনও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। তবে চেষ্টা চলছে।



আরবি হরফে প্রথম দিকে যে কুরআন লেখা হয়েছিল। সে লিপির নাম কুফি। তৃতীয় খলিফা ওসমান বিন আফফানের হাতে লেখা কুরআনের একটি পাতা দেখেন।



আর বর্তমানে সৌদি আরবের কুরআন কমপ্লেক্সের প্রধান ক্যালিগ্রাফার ওসমান তাহা'র হাতে লেখা কুরআনের পাতা। এটি নাশখ(কপি করা) লিপিতে লেখা।



কিন্তু ক্যালিগ্রাফির এখন প্রাধান লিপি হচ্ছে সুলুস(এক তৃতীয়াংশ)। এর শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য অসাধারণ।



এলিপির স্বতন্ত্র হরফ কেমন, সেটা দেখেন।



আরবি হরফ ২৮টি। কিন্তু মুল কাঠামো ১৮টি। আর প্রাথমিক হরফ ৩টি। আলিফ, বা এবং নুন থেকে বাকী হরফের আকৃতি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া নোকতা বা ডট ব্যবহার করে হরফ বাড়ানো হয়েছে। এখানে নোকতা বাড়িয়ে হরফ আলাদা করার একটি ছবি দেখেন।



আরবিতে একটি হরফ শব্দের প্রথমে, মধ্যে এবং শেষে বসলে চেহারা পাল্টে যায়। এখানে ফা হরফটির রূপান্তর কেমন হয় দেখা যাক।



সুলুস লিপির একটি ক্যালিগ্রাফি



আরবি হরফ বিভিন্ন ভাষার লিপি হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভাষা লেখা হয়ে থাকে লাতিন হরফে। এরপরেই আরবি হরফের স্থান। ফারসী, ওসমানীয় তুর্কি, উর্দু, মালে, দারি, কুরদিস, পস্তু, বালুচী, কাশ্মীরী, সিন্ধী, ইথোপিয় প্রভৃতি ভাষা আরবি হরফে লেখা হয়ে থাকে।

আরবি হরফকে এত সুন্দর এবং দৃষ্টি নন্দন দেখানোর রহস্য হচ্ছে- এর বাহ্যিক গঠনে নমনীয়তা এবং চর্বিহীন ধারাল শরীর, আর সচল ভঙ্গী। হরফ দেখলে মনে হয়, এটি চলছে। এই গতিশীলতা দৃষ্টিকে ক্রমশ সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আর তাল-লয়-ছন্দকে এতে খুব সচেতনভাবে জুড়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া অলঙ্কারের ব্যবহার একে আরো রূপবতী করে তুলেছে।



চলবে-

ছবি- নেট থেকে।


----------------------------------------------------------
আগের পোস্ট

ক্যালিগ্রাফির ক্লাস............পর্ব এক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন