বুধবার, ১১ এপ্রিল, ২০১২

ক্যালিগ্রাফির ক্লাস...........পর্ব তিন




প্রত্যেকটি লেখা, সেটা ধর্মীয় কিংবা সেক্যুলার যাই হোক, পাঠকের কাছে একটি বার্তা নিয়ে আসে। তা হচ্ছে, কে এটা লিখেছে! লেখার বাহ্যিক এবং অন্তরনিহিত আবেদন পাঠককে লেখক সম্পর্কে হৃদয়ে একটি চিত্র দাড় করিয়ে দেয়। একটি লেখা যদি সরাসরি হাতের লেখা হয় আর তাতে শিল্পরস সমৃদ্ধ হয়। পাঠক তাতে আপ্লুত হয়।

আরবি ক্যালিগ্রাফিতে কোন সে আকর্ষণীয় উপাদান রয়েছে যাতে পাঠক মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কুরআনের অবতীর্ণ প্রথম শব্দটি হচ্ছে "পড়!" এর দ্বারা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝা যায়। পৃথিবীকে এবং স্বর্গকে পড় চিহ্ন হিসেবে। আপনি প্রথমেই এবং অবশ্যই আগে একজন পাঠক, তারপর বিশ্বাসী।

ক্যালিগ্রাফিকে তাই রেখার আর্ট হিসেবে প্রথমে বিবেচনা করা হয়। আমরা ক্যালিগ্রাফি শব্দটাকে এখানে এভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি- এটা এমন একটি শিল্পকলা, যা অত্যন্ত সচেতন, গুরুত্ব দিয়ে নির্দিষ্ট জ্যামিতিক এবং অলংকারিক আইন প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ভাষার উপাদানগুলোকে দৃশ্যমান রেখায় তা এমনভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়, যেন হৃদয়ে তা অজান্তে দোলা দিয়ে যায়।

উপরের ছবিটি আরবি শব্দ "কালিমা"। এর অর্থ- শব্দ। ১৪-১৫ শতকে এ ধরণের লিপির ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। এখানে যেটা আছে, তা অবশ্য আমার নিজের হাতে লেখা। একে 'ফুলেল কুফি' বলে। হরফের প্রান্তগুলো লতা-পাতা এবং ফুল শোভিত করার যে প্রচেষ্টা দেখা যায়। এতে সুক্ষ্মভাবে শিল্পকলার রীতিগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। এতে খাগ বা কঞ্চির কলম আর কালি দিয়ে শুধু রেখার যে গতিপ্রকৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তুলির ব্যবহারে তা সম্ভব নয়।

নান্দনিকতা বলে শিল্পকলায় যে বিষয় রয়েছে। সেখানে পটভূমির প্রেক্ষিতে মূল বিষয়কে আকর্ষণীয় করে স্থাপন করাটাই সার কথা।

বাঙলা ক্যালিগ্রাফিতে সেই কাজটি এখনও আমরা সেভাবে করে উঠতে পারিনি।




 ----------------------------------------------------------
আগের পোস্ট

ক্যালিগ্রাফির ক্লাস............পর্ব এক

ক্যালিগ্রাফির ক্লাস...........পর্ব দুই

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন