শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১

স্মৃতিকথা-1

 

 

আমার বোর্ডিং বেলার কথা

এক.
হাইস্কুলের বোর্ডিংয়ে একটা সময় আমার কেটেছে। বোর্ডিংয়ে এসে কয়েকদিনের মধ্যে জমিয়ে ফেললাম। খেলাধুলা, গান-কবিতা, ছবি আকা এবং দেয়াল পত্রিকা বের করা ইত্যাদিতে ভালই সময় কাটতে লাগল। সিনিয়র ভাইরা দেয়াল পত্রিকা বের করবে। আমি তাদের সাথে অংশ নিতে চাইলাম।

আমাকে চান্স দিল না। বলা হল, লেখাটেখা দিতে পারো, সিলেক্ট হলে পত্রিকায় ঠাই পাবে। খোজ নিয়ে জানলাম, আমাদের জুনিয়ররা বেইল পাবে না। তো কি আর করা। আমরা গোপনে আলাদা ভাবে একটা দেয়াল পত্রিকা করে ফেললাম, নাম দেয়া হল- নবীন উষা। যেদিন বড়দের দেয়ালিকা বোর্ডে টানানো হল। সেদিন আমাদের নবীন উষাও আমার রুমের সামনে দেয়ালে টানানো হল। বোর্ডিং সুপার বড়দের দেয়ালিকার স্পন্সর। তিনি খবর পেয়ে পত্রিকা দেখতে চলে এলেন। আমাকে তার রুমে তলব করে বললেন, অনুমতি ছাড়া সাহিত্য চর্চা অপরাধ। সুতরাং বেত দিয়ে হালকার উপর ঝাপসা দিলেন। পরে অবশ্য প্রিন্সিপাল সাহেব আমাদেরটার জন্য স্পিশাল এনাম দেন এবং পরে শিশু একাডেমীর মৌসুমী প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায় পুরস্কারও পায় আমাদের দেয়ালিকা।


দুই.

আমাদের সাথে বজলু নামে এক বিচিত্র স্বভাবের ছেলে ছিল। কয়েক দিন পর পর তার মাথায় আজব সব বুদ্ধি আসতো। একদিন আমারে কইল, শেখু ভাই, আমারে তো এখানে কেউ চিনে না, তুমি ত গান কবিতা ছবি আকা দিয়া সবার কাছে পরিচিত, তুমারে একনামে সবাই চিনে। আমারে একখান বুদ্ধি দেওতো, যাতে একদিনেই সবাই আমারে চিন্যা ফালায়।

হঠাৎ আমার মাথায় শয়তানি বুদ্ধি বাইর হইল। কইলাম, বজলু এক কাম কর, বিল্ডিং-টয়লেট গাছপালা সবখানে তোর নাম লিখা দে।


তো পরদিন বোর্ডিং সুপার তার দরবারে আমারে ডাইকা পাঠাইল। গিয়া দেখি বিশাল জমায়েত। মাঝখানে টেবিলেন ওপর পাকা বেত রাখা। বজলুর মুখ শুকনো। কয়েকজন আমারে দেইখা কেলাইল। আমারও কইলজাডা হঠাৎ তড়পাইতে লাগল।


সুপার আমারে দেইখা শক্ত হইয়া গেলেন। মুখ ফিরাইয়া বললেন, বজলু, এই বিল্ডিং ঐ বিল্ডিং টয়লেট গাছ গাছালি সব জায়গায় নাম কি তুইই লিখছোস?


বজলু মিচকা শয়তানের মত চোখ উল্টাইয়া কইল, স্যার! এই লিখনের বূদ্ধি শেখু আমারে দিছে।

আমার তখন যায় যায় অবস্থা। আমি নিজেরে বাচানির জন্য কইলাম, স্যার, আমার কুনু দোষ নাই। বজলু আমারে হাত-পায় ধইরা বুদ্ধি চাইল, কেমনে তার নাম একদিনে ফুটানো যায়। এর লাগি, আমি কইছিলাম নাম লিখতে।

স্যার প্রচন্ড রাগের মধ্যে হঠাৎ হাইসা দিয়া কইলেন। ঠিক আছে, তোরা দুইটাই গিল্টি। এদিক আয়, একটু হাত বুলায়া দেই।


ব্যাস, দশ দশখান বেত হজম করলাম এবং মুফতে বজলুর লগে সারাদিন বালতি পানি নিয়া নাম মুছনের মহৎ কর্মে লিপ্ত হইলাম।

২টি মন্তব্য: