শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১

লিপি নিয়ে কিছু কথা (এক)

লিপির প্রয়োজন কেন?
একটা চিরন্তন সত্য হচ্ছে, মানুষের জীবনটা আয়ুর পরিধিতে সীমাবদ্ধ। কিন্তু তার কীর্তি সময়কে অতিক্রম করে অমরত্ব লাভে সক্ষম। আর এ জন্যই সচেতন মানুষ মাত্রই স্বীয় অমর কীর্তি প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকেন। আমরা অতীত এবং বর্তমান সময়ের পরতে পরতে দৃষ্টি দিলে দেখতে পাই, রাজা রাজন্যসহ সমাজপতি সচেতন শিক্ষিত শ্রেণী তাদের কীর্তিকথা বিজয়গাথা, রাজ্যশাসনের নীতিমালা, উল্লেখযোগ্য ঘটনা প্রভৃতি লিপিবদ্ধ করে গেছেন।
কালের অতল গহ্বরে অনেক কীর্তি হারিয়ে যায় আবার কোন উৎকীর্ণ লিপি থেকে জানা যায় অতীত রহস্য।
ভবিষ্যতের জন্য কীর্তির তথ্য জমা রাখার সহজ পন্থা হিসেবে লিপির অবলম্বন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
এভাবে লিপির মাধ্যমে অতীত অভিজ্ঞতা চলে আসে বর্তমানের হাতে।


হরফতত্ত্ব(Paleography)
প্রাচীন লিপির পাঠোদ্ধার এবং সেসব লিপির আগাপাশতলা বের করার জন্য এক ধরণের জ্ঞান চর্চা করা হয়, এটা হরফতত্ত্ব নামে পরিচিত। প্রত্নতত্ত্বে যে মটিফ(Motif) সংরক্ষণ করা হয়, তাতে টেরাকোটা 'তবক' বা চাকতি লিপি(terracotta tablet script), ধাতব ফলকলিপি(metal plates inscriptions), বা শিলা ফলকলিপি(stone inscriptions) প্রধান। এছাড়া আরো নানান রকম উপাদান আছে, যা হরফতত্ত্বের অন্তর্ভূক্ত।
এ এক বিচিত্র এবং অত্যন্ত কষ্টসাধ্য জ্ঞান চর্চা। এমনও ঘটনা আছে একটি শিলালিপির পাঠোদ্ধার(decipher) করতে বছরের পর বছর গড়িয়ে যায়। যদিও একটা পাঠ পাওয়া গেল, কিন্তু পরে তা ভুল প্রমাণিত হলো। তবু প্রথম পাঠকে খুব গুরুত্ব দেয়া হয়।


লিপি নিয়ে যারা কাজ করেন
লিপি নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের কাজের ধরণ ভিন্ন ভিন্ন দেখা যায়। কেউ লিপির প্রাচীন পাঠোদ্ধারে জীবন কাটিয়ে দেন। কেউ নতুন লিপি তৈরির কাজ করেন, যাকে লিপিকার(Calligrapher/Calligraphist) বলা হয়। আবার লিপি নিয়ে শিল্পকলা করেন যিনি, তাকে লিপিশিল্পী(Calligraphy Artist) বলে।
প্রত্নতত্ত্বের সাথে শিলালিপির পাঠোদ্ধার(decipher) বিষয়টি জড়িত। ছাপাখানা, বই হাতে লেখা, প্রচ্ছদ, বই অলঙ্করণ প্রভৃতির সাথে নতুন লিপি বা প্রচলিত লিপির নতুন সংস্করণ করেন লিপিকার।
আর শিল্পকলায় লিপিকে অনুসঙ্গ করে কিংবা লিপি দিয়েই শিল্পকর্ম করেন লিপিশিল্পীরা। আমাদের ঢাকার চারুকলায় প্রাচ্যকলা বিভাগে এ বিষয়ে তালিম দেয়া হয়।
তবে অধিকাংশ ভাষার লিপি দিয়ে এখন আর শিল্পকলার প্রবাহমান ধারা লক্ষ্য করা যায় না। এক্ষেত্রে চীনা ও জাপান বা কোরীয় লিপি চিত্রের অনুসঙ্গ হিসেবে এখনও টিকে আছে। আর আরবি লিপি নিজেই একটি জীবন্ত শিল্পকলা হিসেবে ঐতিহ্যবাহী ধারা এবং আধুনিক শিল্পকলা হিসেবে প্রবহমান।

লিপির ইতিহাস মানব সভ্যতার ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত। মজার ব্যাপার হচ্ছে, অনেক ভাষার নিজস্ব লিপি নেই। সেদিক দিয়ে আমরা গর্বিত, আমাদের বাংলা ভাষার নিজস্ব লিপি আছে।



চিত্র-এক.
প্রাচীন মিশরীয় চিত্রলিপি(হায়েরেগ্লিফিক)। এ ধরণের লিপি ধর্মীয় এবং শাসকদের বর্ণনা সংরক্ষণের জন্য বেশি ব্যবহার করা হত। একে পবিত্র লিপিও বলা হয়।


চিত্র-দুই.
প্রাচীন কিলকাকার(কিউনিফর্ম) লিপি, উৎকীর্ণ প্যালেট।


চিত্র-তিন.
লাতিন লিপি উৎকীর্ণ করা হচ্ছে। হাতে আকা প্রাচীন ছবি


চিত্র-চার.
আব্রাহাম(ইব্রাহিম) এবং তার পুত্রের কুরবানির ঘটনা উল্লেখ করে চিত্র সম্বলিত প্রাচীন গ্রন্থ।


চিত্র-পাঁচ.
ধর্মীয় গ্রন্থ লিখছেন একজন ক্যালিগ্রাফার। একটি কল্পিত চিত্র আকা হয়েছে।


চিত্র-ছয়.
মধ্যযুগে হাতে আকা একটি ছবিতে একজন লিপিকার লেখার কাজ করছেন।


চিত্র-সাত.
মধ্যযুগে এটি গ্রন্থের অলংকৃত লিপিসহ একটি পাতা।


কারো কাছে এ বিষয়ে কোন তথ্য থাকলে দয়া করে জানাবেন।

লেখার তথ্য সূত্র-
১. বর্ণমালার উদ্ভববিকাশ ও লিপিসভ্যতার ইতিবৃত্ত
২. ভাষা লিপি ও সাহিত্য
৩. বাঙালা লিপির উৎস ও বিকাশের অজানা ইতিহাস
৪. বই এল কেমন করে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন